বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেন :অমর্ত্য সেন

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পরও সংযত আচরণ করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছেন নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো ভারতের চেয়ে ‘তুলনামূলকভাবে স্বাধীন’ রয়েছে। সরকারবিরোধী দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা সত্ত্বেও সেগুলো উন্নতি করেছে। অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি। তাদের এই সংযমের প্রশংসা করতে হয়। অথচ অন্যান্য অনেক দেশে অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় শান্তিনিকেতনে নিজ বাড়িতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বন্ধু নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু এই অচলাবস্থা সমাধানের জন্য সামনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নই।
অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এতদিন মূলত জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি এই প্রশংসনীয় অঙ্গীকার অব্যাহত থাকা উচিত।
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন পিটিআইকে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, কারণ আমার বাঙালি পরিচয়ের একটি শক্তিশালী অনুভূতি আছে। আমি ঢাকায় অনেক সময় কাটিয়েছি এবং আমার স্কুলের পড়াশোনাও সেখানেই শুরু হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও আমি প্রায়ই মানিকগঞ্জে আমার পৈতৃক বাড়িতে যেতাম। আমি নিয়মিত আমার মায়ের দিকের (পৈতৃক বাড়ি) বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারঙে যেতাম। আমার কাছে এই জায়গাগুলোর গভীর ব্যক্তিগত তাৎপর্য রয়েছে। অন্য অনেকের মতো, আমিও চিন্তিত বাংলাদেশ কীভাবে তার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠবে।
শৈশবের বেশিরভাগ সময় ঢাকায় কাটিয়েছেন অমর্ত্য সেন। তিনি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে চলে যান এবং নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কুলে পড়াশোনা করেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে অমর্ত্য সেন মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতির কথা তুলে ধরে বলেন, একপর্যায়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে এবং ভারতের তুলনায় জন্মহার অনেক কমেছে এবং গড় আয়ু বেড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে নারী অধিকারের অগ্রগতিতে। এর পেছনে ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর অবদান রয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে অন্যান্য দলগুলো আওয়ামী সরকারকে যে ভুলের জন্য অভিযুক্ত করেছে, সেটিরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
অমর্ত্য সেন বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচিত কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে একপাশে রাখার চেষ্টা করার পরিবর্তে একসঙ্গে কাজ করার ঐতিহ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। আমি আশা করি, স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতি বাঙালির অঙ্গীকার অটুট থাকবে। আমি আশা করি, অনেকে আগের নির্বাচনগুলো যেমন হতো বলে দাবি করেন, ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো তার চেয়ে বেশি দৃশ্যত অবাধ হবে। পরিবর্তনের সুযোগ আছে। আমি বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু আশাহীন নই।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তার মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে অমর্ত্য সেন বলেন, ইউনূস আমার পুরনো বন্ধু। আমি জানি, তিনি অত্যন্ত সক্ষম এবং নানা দিক থেকে একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার প্রসঙ্গে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি আপনি হঠাৎ করে কোনো দেশের প্রধান হয়ে যান, যেমনটি ইউনূসের ক্ষেত্রে হয়েছে, তাহলে আপনাকে বিভিন্ন গোষ্ঠী বিবেচনা করতে হবে। এখানে ইসলামী দল আছে এবং এখন হিন্দুও আছে। ইউনূসের সামর্থ্যরে ওপর আমার অনেক আস্থা আছে।