
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরেই বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা-গ্রেফতার, গুম-খুন, নির্যাতনে জর্জরিত। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দলটির নেতাকর্মীদের একত্রিত হওয়ার সুযোগই ছিল সীমিত। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ও সেই সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন মুক্ত বাতাসে নির্বিঘেœ হাঁটাচলা করতে পারছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। উপভোগ করছেন নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
এমন পরিবেশে সাত বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির বর্ধিতসভা। যেখানে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা ছাড়াও জেলা-উপজেলা, থানা ও পৌরসভার সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতর কারণে এই সভায় আসতে নেতাদের মধ্যে ছিল না কোনো গ্রেফতার আতঙ্ক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডজন ডজন শর্ত, বাধাহীনভাবে কেন্দ্রীয়সহ সারাদেশের বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে এলডি হল পরিণত হয় মিলনমেলায়। যেখানে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিয়েছেন দিকনির্দেশনা ও সতর্কবার্তা। একইভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দিয়েছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ, দিকনির্দেশনা ও দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর বার্তা। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সরেজমিন দেখা যায়, বর্ধিত সভার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১০টা। এর আগে সকাল ৮টা থেকেই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, থানা ও পৌর বিএনপি নেতারা সভাস্থলে আসতে শুরু করেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমন্ত্রিত সব নেতা উপস্থিত হয়ে সভাস্থল মিলনমেলায় পরিণত হয় এলডি হল। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর মুক্ত পরিবেশে সারাদেশের নেতারা একে-অপরের সাথে খোশগল্প ও আড্ডায় মেতে উঠেন। দিনভরই চলে তাদের এই মিলনমেলা। কখনো সভার বিরতিতে, কখনো-বা চায়ের বিরতি কিংবা খাবার টেবিলে পরস্পরের খোঁজ নিয়েছেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা হয়েছে তৃণমূল নেতাদের। তাদের সুন্দর এই মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখতে সভাস্থলে ছবি-ভিডিও করেছেন তারা।
কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে বর্ধিতাসভা শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াত ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক কাজী মো. সেলিম রেজা। সভার শুরুতে জানানো হয় লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখান থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। তার উপস্থিতির সংবাদে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেন অংশগ্রহণকারী নেতারা। এদিন তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপলক্ষই ছিল দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি।
২০১৮ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লো মেরিডিয়ান হোটেল বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিতসভা হয় যেখানে খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেছিলেন। প্রধান অতিথি খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর কর্ম-অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে তৃণমূলের শ’খানেক নেতা বক্তব্য রাখেন। বর্ধিতসভার মূল মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বসা ছিলেন। ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত হন স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সভা পরিচালনা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। প্রায় সাড়ে তিন সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী সশরীরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই শতাধিক নেতা ভার্চুয়লি সভায় সংযুক্ত ছিলেন। দুটি অধিবেশনের এই সভায় কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান।
বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসা এবং অবিলম্বে আগামী দিনগুলোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনে জন্য ‘বিএনপিকে প্রস্তুত’ করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, মাফিয়া প্রধানের পালানোর পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় হয়তো ঘনিয়ে আসছে। তাই দলকে কোনো ব্যক্তি নয়; বরং দলকে এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে আপনারা প্রস্তুত করুন। সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভাকাক্সক্ষীদের প্রতি আমার আহ্বানÑ আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকুন, আপনারা যেকোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখুন।
দেশবাসীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি শুধু আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনার কাছে, আপনাদের কাছে তথা দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জনগণের সমর্থন চাই, চাই সবার সহযোগিতা।
বিএনপি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের প্রশ্রয় দেবে না জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই… তিনি বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দলের প্রতি আপনার, আপনাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘদিনের সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তারপরও যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হবেন, ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হয়েই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুণœ হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।
তিনি বলেন, জনগণেই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে, জনগণও বিএনপিকে বিশ্বাস করে। সুতরাং আপনার প্রতি আপনাদের প্রতি বিএনপির প্রতি জনগণের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বিএনপি সমার্থক। দেশের গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি থাকে, গণতন্ত্র বিপন্ন হলে বিএনপির স্বার্থ বিপন্ন হয়।
ভোটের বিকল্প নেই জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠার করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।
নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টাদের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণও হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্ম পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। একে নস্যাৎ করার জন্য ইতোমধ্যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্ত পিছলে রাজপথে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে। জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি আজ দেশের কৃষক-শ্রমিক-জনতা, আলেম-উলামা-পীর-মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে আপনারা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন আপনাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে তাদেরকে সর্তক থাকার আহ্বান এবং অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমেনি। সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।
স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারেক রহমান বলেন, সরকার যেখানে বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেনো দেশের পরিস্থিতি কেনো আরো ঘোলাটে করতে চাইছে, এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণ-অভ্যুত্থান আকাক্সক্ষাবিরোধী, গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না, বিএনপি পা দিতে পারে না।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণহত্যাকারী মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এই পর্যন্ত বেশ অনেকগুলো নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সব নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং প্রতিটি দলের অংশগ্রহণ একটি অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। তিনি বলেন, দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।
বিএনপি গণহত্যাকারীদের বিচার করবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে বিএনপি জনরায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে আগামী দিনগুলোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন পর মুক্ত বাতাসে আমরা সারাদেশের নেতাকর্মী একত্রিত হতে পেরেছি, এটি আমাদের অত্যন্ত ভালোলাগা কাজ করছে। এর সঙ্গে গণতন্ত্রের মা, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্ধিত সভায় উপস্থিত হয়েছেন এবং বক্তব্য প্রদান আমাদের জন্য ছিল সারপ্রাইজ।
ঢাকা মহানগর বিএনপির নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমা বলেন, ১৫ বছর পর আমাদের এই মিলনমেলা। যেটি আসলে এতদিন এভাবে সম্ভব হয়নি। এছাড়া দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, এটিও আগামী দিনে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে ঐক্যের বিকল্প নেই সেটি আমাদের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, সেটিও আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কণ্ঠশিল্পী ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির নেত্রী কনকচাঁপা বলেন, দীর্ঘদিন পর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে একই মঞ্চে দেখলাম। এই অনুভূতি বর্ণনা করার মতো না।
রাজশাহী জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথা শুনেছেন শীর্ষ নেতারা। আমাদের অনেকেই বলেছেন, দল যেন সুশৃঙ্খল থাকে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের কেউ কেউ দলের কারো কারো মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। কোনোভাবেই যেন দোসররা পুনর্বাসিত না হন। এছাড়া বিগত ১৭ বছর ধরে যারা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন এমন ত্যাগীদের মূল্যায়ন ও তাদের দিয়েই যেন কমিটি গঠন করা হয়।
যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন হাসান বলেন, সারাদেশের নেতাদের এই মিলনমেলা থেকে সবাই উজ্জীবিত হয়েছেন। একই সঙ্গে এই সভা থেকে নির্বাচনের দিকে আমরা হাঁটা শুরু করলাম। আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত নির্বাচনের ঘোষণা দেবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব বলেন, বিতাড়িত ফ্যাসিস্টরা পার্শ্ববর্তী দেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের নেতা বলেছেন সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমরা সবাই বাংলাদেশি, এই চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধকে অটুট রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।