বর্জ্য-দূষণে হুমকির মুখে লাল কাঁকড়া বিচ

প্লাস্টিক বর্জ্য ও অবাধে গাড়ি চলাচলে হুমকির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া জালিয়াপালং বাইল্যাখালী লাল কাঁকড়া সি-বিচের পরিবেশ। সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে প্রশাসনের দেওয়া সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এ সৈকত। এতে মারা গিয়ে লাল কাঁকড়ার সংখ্যা দিনদিন কমছে।
জানা যায়, কক্সবাজার, উখিয়া সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান বাইল্যাখালী লাল কাঁকড়া সি-বিচ। এই বিচে লাল কাঁকড়া সৈকতে ভাটার পর চিকচিক করা বালিয়াড়িতে গর্ত থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এসময় পা দিয়ে নানান আকৃতির আলপনা তৈরি হয়। যা পর্যটকদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। এতে এই বিচে পর্যটকদের ভ্রমণ বাড়ছে। এজন্য গত দুই বছর আগে ওই এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে লাল কাঁকড়া সি-বিচ নাম দিয়েছে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। সি-বিচের সৌন্দর্য ও লাল কাঁকড়া ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন নিদিষ্ট এলাকাকে বাঁশ ও কাঠের সীমানা প্রাচীর দিয়ে চিহ্নিত করেছে। দৃষ্টিনন্দন এই বিচটি কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংরক্ষিত লাল কাঁকড়ার এই বিচের সীমানা প্রাচীরের বাঁশ ও কাঠ নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে। মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে ঝাউগাছের ভেতর দিয়ে গাড়ি নামছে এই বিচে। মাছ ধরার নৌকা যাতায়াত করছে। বিচের পাশে ময়লা আবর্জনা রাখার ব্যবস্থা না থাকায় সীমানা প্রাচীরের ভেতরে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেলছেন। ফলে পুরো বিচ এলাকা, ঝাউবন ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দৃষ্টিনন্দন এ বিচের পরিবেশ।
জালিয়াপালং বাইল্যাখালী স্থানীয় বাসিন্দা জাফর আলম বলেন, লাল কাঁকড়ার বিচ দেখার জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম দেখা যায়। অনেক দূর থেকে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও লাল কাঁকড়া দেখতে বিচে আসেন। কিন্তু তারা যেসব খাওয়া-দাওয়া করেন সব প্যাকেটগুলো বিচের পাশে ঝাউবনসহ বীচের মধ্যে যত্রতত্রভাবে ফেলায় পুরো বিচের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। সংরক্ষিত লাল কাঁকড়া বিচে প্রবেশের নিদিষ্ট জায়গায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঘেরাও ছিল। এখন কে বা কারা ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলেছে। ময়লা আবর্জনা রাখার জন্য ডাস্টবিনের ব্যবস্থা দরকার। লাল কাঁকড়ার বিচের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ও কাঁকড়ার বিচরণ যেন নষ্ট না হয় এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, এর আগে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সি-বিচকে সংরক্ষিত ঘোষণার পর লাল কাঁকড়ার বিচরণ বেড়েছিল। প্রতিদিন চরের বুকে সকাল-বিকেল দলবেঁধে লাল কাঁকড়া ঘুরে বেড়াতো। এখন লাল কাঁকড়ার সংখ্যা কমছে।
জালিয়াপালং বাইল্যাখালী স্থানীয় বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, বিচে আসা মোটরসাইকেল ও সমুদ্র সৈকত থেকে নৌকা তোলার ট্রাক্টর গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে অসংখ্য লাল কাঁকড়ার মৃত্যু হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেরা গর্ত খুঁড়ে লাল কাঁকড়া ধরে। বিগত সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সি-বিচ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, এখন এটি দিনদিন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। লাল কাঁকড়া সি-বিচ রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
জালিয়াপালং বাইল্যাখালীর ফটোগ্রাফার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, লাল কাঁকড়া সি-বিচ আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। বীচের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধরে রাখতে না পারলে লাল কাঁকড়া হারিয়ে যাবে। ফলে এখানে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাবে। পর্যটকরা ছবি তুললে টাকা উপার্জন করা যায়। যদি বিচে পর্যটক না আসে তাহলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো।
উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, বিচটি অনেক সুন্দর। লাল কাঁকড়া সংরক্ষণে ও ভাঙা অবকাঠামো মেরামতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বিচ সংরক্ষণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমএন/এমএস