ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়েছে : ব্যারিস্টার আরমান

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় কমিটি সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম (ব্যারিস্টার আরমান) বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় আসামী করে ফাঁসি দিয়েছে। আমার বাবাকে যখন মিথ্যা মামলায় আসামী করে, তখন তিনি বিদেশে ছিলেন। আমার বাবা প্রকৃত অপরাধী হলে সে সময় তিনি দেশে নাও আসতে পারতেন। কিন্তু তার বুকে সৎ সাহস ছিল। তাই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং দেশের আসার পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি ইচ্ছা করলে যেকোনো ইসলামী দেশগুলোতে রাজনৈতিক আশ্রয়ও নিতে পারতেন। তিনি কিন্তু সেটাও করেননি।”
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামের আহমাদিয়া সুলতানিয়া সামসুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশে বাবার কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনে দীর্ঘ ৮ বছর পর আয়না ঘর থেকে মুক্তি পেয়ে এই প্রথমবারের মতো পৈতৃক ভূমিতে বাবার কবর জিয়ারত করতে আসেন। এসময় তাকে দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। কবর জিয়ারতের পর তিনি আহমাদিয়া সুলতানিয়া সামসুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে আয়না ঘর সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমার পিতার মামলায় আমি একজন নিয়োজিত আইনজীবী ছিলাম। ওই মামলার একদম শেষ পর্যায়ে যখন শুনানি চলছে । ফাঁসি কার্যকরের ঠিক ২৩ দিন আগে আমাকে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং ৮ বছর আমাকে চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়। ওই আট বছর আমি জানতে পারিনি আমার পিতার কী হয়েছে। আমার পরিবার জানতে পারেনি আমি কি বেঁচে আছি? না মারা গেছি। ছাত্রদের বিপ্লবের পর আমাকে মুক্ত করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, আমি মুক্ত হয়ে জানতে পারি, আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা ফাঁসি দিয়েছে। আমি আয়না ঘর থেকে বের হওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার দুই চোখে ছানি পড়ে গিয়েছিল। আমি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। দেশে ফিরে আমি এই প্রথম মানিকগঞ্জে আমার পিতার কবর জিয়ারতের জন্য আসি।
মীর কাশেম আলীর স্বপ্ন নিয়ে তিনি বলেন, “মানিকগঞ্জ জেলা আমার পিতার পৈতৃক নিবাস। অন্তরের জায়গা। এখানে উনার নাড়ি পোতা রয়েছে। এই মানিকগঞ্জ নিয়ে উনার অনেক স্বপ্ন ছিল, ছিল পরিকল্পনা। এই মানিকগঞ্জকে তিনি একটি আধুনিক নগর হিসাবে তৈরি করার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, মানিকগঞ্জকে স্যাটেলাইট সিটি হিসেবে তৈরি করবেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, এই মানিকগঞ্জ থেকেই তিনি রাজধানীতে অফিস করবেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক চক্রান্তে তাকে ফাঁসি দিয়েছে। আল্লাহর ওপর যাদের আস্থা আছে, যারা ইসলামকে বিশ্বাস করে, যারা ন্যায়ের পথে থাকে, তারা কখনও অন্যের কাছে মাথা নত করে না। যেমনটি আমার বাবাও করেন নাই। আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।”
এসময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা উত্তর অঞ্চলের টিম সদস্য ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সম্ভব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম, সেক্রেটারী মাওলানা নূরুল ইসলাম, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা জাকিরুল ইসলাম খান, হরিরামপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা লোকমান হোসেন, সেক্রেটারী মো. ফারুক হোসেন, হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. টিপু সুলতানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।