ফাইনালে ভারতই ফেবারিট, তবে…

করাচি, রাওয়ালপিন্ডির পর দুবাই ঘুরে লাহোর, এরপর আবার দুবাই- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের আগে এই ছিল নিউজিল্যান্ড দলের বিমানযাত্রা। আকাশপথে অতিক্রম্য দূরত্ব ৭০৪৮ কিলোমিটার। বিপরীতে ভারত ক্রিকেট দলের আকাশপথ ভ্রমণের দূরত্ব শূন্য! রোহিত শর্মার দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য সেই যে ১৬ ফেব্রুয়ারি দুবাই শহরে পা রেখেছে, এখন পর্যন্ত আছে সেখানেই।
অন্য সব মানদ- এক পাশে সরিয়ে রাখলেও শুধু ভ্রমণঝক্কির কারণেই আগামীকাল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকার কথা ভারতের। রোহিতের দল এগিয়ে আছে টুর্নামেন্টজুড়ে অপরাজিত, ব্যাটসম্যানদের রানে থাকা আর স্পিনারদের সময়মতো জ্বলে ওঠা পারফরম্যান্সের কারণেও। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে ফেবারিট বলতে তাই খুব বেশি দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে না তেমন কাউকেই। তবে মুদ্রার অপর পিঠে আছে অন্য বাস্তবতাও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে সাদা ব্লেজারটা পরার বড় দাবিদার যে কালো জার্সির নিউজিল্যান্ডও।
২০২৩ বিশ্বকাপসহ এ নিয়ে ৫০ ওভারের আইসিসি টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় ফাইনাল খেলছে ভারত। দেশটির ক্রিকেটে আলোচনা আছে, ৩৭ বছর বয়সী রোহিত আর ৩৬ বছর বয়সী বিরাট কোহলি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন। যেমনটা আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিকে জানিয়েছিলেন গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর। আর রোহিত-কোহলির সম্ভাব্য অবসরকে রাঙিয়ে তুলতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ঘিরে ভারতের উচ্ছ্বাসও অনেক।
তবে ম্যাচটা ‘ফাইনাল’ আর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড বলেই দুবাইয়ের শিরোপা নির্ধারণীতে ভারত একপেশে ফেবারিট নয়। সবচেয়ে তাজা স্মৃতি তো ২০২৩ বিশ্বকাপেরই। বছর দেড়েক আগের সেই টুর্নামেন্টে ঘরের মাঠে টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল রোহিতের দল, যার মধ্যে সেমিফাইনালসহ দুটি জয় ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। কিন্তু তুমুল ফেবারিট হয়েও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে থমকে গিয়েছিল ভারত।
আর ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল’ তো ভারতের জন্য আরও বড় ভাবনার। এখন পর্যন্ত দুবার আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে কিউইদের মুখোমুখি হয়েছে ভারত। প্রথমবার ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (তখন নাম ছিল আইসিসি নকআউট), দ্বিতীয়বার ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে। দুটিতেই জয়ী দলের নাম নিউজিল্যান্ড। গতকাল তো দুই যুগ আগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল নিয়ে বানানো একটি ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। ‘২৫ বছর আগে, একই মঞ্চে, একই প্রতিপক্ষ’ শিরোনামের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার দুটি দিক আছে—মিচেল স্যান্টনারের দলসহ দর্শক–সমর্থকদের আরেকটি ট্রফি জয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা, একই সঙ্গে প্রতিপক্ষ ভারতকেও নিজেদের অতীত সাফল্য মনে করিয়ে একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ফেলা।
অবশ্য নিউজিল্যান্ডের এই দলটি যে সেটি করতে যথেষ্টই সক্ষম, সেটি কাল নাসের হুসেইন আর অ্যারন ফিঞ্চই মনে করিয়ে দিয়েছেন। ভারতকে ফেবারিট মেনে নিলেও স্কাই স্পোর্টসের কাছে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়কের মন্তব্য—‘নিউজিল্যান্ড হারতেও পারে। যদি হারে, সেটা ভারত তাদের হারাবে বলে।’ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ফিঞ্চের বিশ্বাসও তা–ই, নিউজিল্যান্ড সেই দল, যারা নিজেরা নিজেদের কাছে হারে না। প্রতিপক্ষকে ভালো খেলে জিততে হয়। (নিউজিল্যান্ড) নিজেদের পারফরম্যান্সটা ঠিকই দেখিয়ে দেয়।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বেই একবার ভারত–নিউজিল্যান্ডের দেখা হয়েছে। আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা দুই দলের সেই ম্যাচে ভারত ৪৪ রানে জিতেছিল বোলারদের সৌজন্যে। বিশেষ করে বরুণ চক্রবর্তীর ৪২ রানে ৫ উইকেটে ভর করে। গতকাল নিউজিল্যান্ড কোচ গ্যারি স্টিড এই রহস্য স্পিনারকেই ফাইনালে তার দলের জন্য ‘বড় হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সঙ্গে টুর্নামেন্ট–সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নেওয়া ম্যাট হেনরির ফিটনেসজনিত অনিশ্চয়তার খবরও দিয়েছেন কিউই কোচ। হেনরির সম্ভাব্য অনুপস্থিতি আর বরুণের হুমকির বিষয় দুটিও ভারতেরই অনুকূলে।
তবে এত কিছুর পর ভারতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ থাকছেই। কারণ, ম্যাচটা ফাইনাল, প্রতিপক্ষের নাম নিউজিল্যান্ড।

Source link

Exit mobile version