প্ররোচনার অভিযোগ প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধে

চরিত্র নিয়ে মায়ের ফোনে প্রিন্সিপালের অশ্রাব্য মন্তব্য করার অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় উত্তরার ডন বস্কো স্কুল এন্ড কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী নূর-ই-সাবা অধরা। স্কুলে কোচিং না করা, বিজ্ঞান বিভাগে যোগ না দেয়া এবং সর্বোপরি বখাটেদের কটুক্তির প্রতিবাদ করায় প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল মিসেস শামুসন্নাহার ওরফে লস্কর নাহারের রোষানলের শিকার হয়েছিল কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থী অধরা। এরই ধারাবাহিকতায় অধরার মায়ের ফোনে প্রিন্সিপাল ফোন করে মেয়ের সতিত্ব ও চরিত্র নিয়ে আপত্তি তোলেন। এর কিছুক্ষণ পরই অধরা নিজের রুমে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দীর্ঘদিনের তদন্তে এমনটিই আভাস মিলেছে। আর অধরার আত্মহত্যার জন্য তারই স্কুলের প্রিন্সিপাল মিসেস শামসুন্নাহারই একমাত্র দায়ী এবং অভিযুক্ত।
মামলার সূত্র মতে, উত্তরা ৪ নং সেক্টরের ১৬ নং রোডের ১২ নং হোল্ডিংস্থ ২/সি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রবিউল ইসলামের একমাত্র কন্যা অধরা। লেখাপড়া করত উত্তরা ৪ নং সেক্টর ১৩ নং রোডের ডন বস্ক স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি মাধ্যমের অষ্টম শ্রেণিতে। সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী। প্রতিটি শ্রেণিতে তার অবস্থান ছিল এক থেকে তিনের মধ্যে। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কালচার প্রোগ্রামে থাকত। কালচার প্রোগ্রামে স্কুলের পক্ষে যতগুলো পদক এসেছে তার ৮০ ভাগই অধরার অর্জিত। যে কারণে স্কুলে সবার কাছে মধ্যমণি ছিল। মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে পুঁজি করেই প্রিন্সিপাল স্কুলিটিতে ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তিতে আকৃষ্ট করত।
কিন্তু ২০২৩ সালের ২১ মার্চ বিকেলে অধরা তার নিজ কক্ষে গলায় দিয়ে আত্মহত্যা করে। এর আগে অধরার মায়ের মোবাইল ফোনে স্কুলের প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহার কল করেন। অধরার মা সরল বিশ্বাসে মোবাইলের স্পিকার অন করেছিলেন। তার ধারণা ছিল, প্রিন্সিপাল যেহেতু ফোন করেছেন হয়তো স্কুলের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তাই মেয়েকেও শোনানোর জন্য তিনি স্পিকার অন করে কথা বলছিলেন। কিন্তু ওই দিন অধরা স্কুলে গেলেও কোনো ক্লাস না থাকায় শিক্ষকদের অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধুদের নিয়ে উত্তরার ৪ নং সেক্টরের পার্কে ঘুরতে যায় এবং ফুচকা খেয়েছিল। প্রিন্সিপাল ওই দিন দুপুর পর্যন্ত স্কুলে না থাকলেও বিষয়টি জেনে অধরার মাকে ফোন করে তার মেয়ে প্রেগনেন্ট হতে চলেছে এমন মন্তব্য করেন। একই সাথে অধরা স্কুলে দুষ্টচক্রের লিডার বলে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করেন। এর পরেই অধরা আত্মহত্যা করে।
তার অত্মহত্যার পেছনে একমাত্র পিন্সিপাল শামসুন্নহারকে দায়ী করে অধরার বাবা রবিউল ইসলাম অভিযোগ দিলেও উত্তরা থানা পুলিশ ২২ মার্চ শুধু একটি আত্মহত্যার মামলা রেকর্ড করে। এর এক দিন পরে শামসুন্নাহারকে প্ররোচনার অভিযুক্ত হিসেবে উত্তরা থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা মামলা আকারে নথিভুক্ত না করায় রবিউল ইসলাম আদালতে একটি মামলা করেন। (সিআর মামলা নং ৫৫৯/২০২৩, দ.বিধি ৩০৬/৩০৭)। আদালত এ অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় গোয়েন্দা পুলিশে। মামলাটি উত্তরা ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তার পর বর্তমানে ডিবি উত্তরের এসআই মামুনের তদন্তাধীন।
স্পর্শকাতর মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই মামুন ইনকিলাবকে বলেন, প্রকাশ্যে এবং গোপনে তিনি মামলাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করেছেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অন্তত ৫০ জনের সাথে কথা বলেছেন, এতে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, মেধাবী শিক্ষার্থী অধরার আত্মহত্যার পেছনে তার প্রিন্সপাল শামসুন্নাহারই একমাত্র দায়ী। প্রিন্সিপাল নামধারী শামসুন্নাহারের অশ্রাব্য বাজে মন্তব্য শিশু মনের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে। যা মেনে নিতে পারেনি কোমল হৃদয়ের এ শিক্ষার্থী। যে কারণে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তিনি বলেন, খুব দ্রুতই মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, মামলার একমাত্র অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহারই অধরাকে মানষিকভাবে পর্যুদস্ত করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, স্কুলটির কাগজপত্র নিয়েও বেশ ঝামেলা রয়েছে। স্কুলটি প্রভাব ও কৌশল খাটিয়ে নিজের করে নেন শামসুন্নাহার। অধরা আত্মহত্যার পর মামলা থেকে রক্ষা পেতে তার বাবাকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহার।
তবে এ সব বিষয় অস্বীকার করে শামসুন্নাহার ইনকিলাবকে বলেন, ডিবিতে তদন্তাধীন মামলার বিষয়েও কিছু জানা নেই আমার।