
অগ্নিঝরা মার্চের ৪ মার্চ ছিল ঘটনাবহুল একটি দিন। এই দিনটির ঘটনা প্রবাহ প্রমান করে বাংলাদেশিরা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। ঠিক আগের দিন (৩ মার্চ) বিশাল জনসভা হয়ে গেছে। কার্যত বলা যায়, ৪ মার্চ পূর্ব বাংলায় আর ইয়াহিয়া-ভুট্টোর শাসনের বিরুদ্ধে পুরো বাংলাদেশ জেগে উঠেছিল।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল চলে। প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। চট্টগ্রামে দুদিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
এদিন এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা ভাসানী বলেন, দেশের সব সম্প্রদায়, যেমন- মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বাঙালি বা অবাঙালি সবার মাঝে সহযোগিতা ও পূর্ণ শান্তি বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, ওরা সাম্রাজ্যবাদের দালাল। ওদের শোষণ-নির্যাতনে ৮৫ ভাগ বাঙালি আজ প্রায় মৃত্যুর সম্মুখীন। সুতরাং, যে ব্যক্তি, যে রাজনৈতিক দল অথবা যে রাজনৈতিক নেতা পশ্চিমাদের সঙ্গে কিংবা সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে কোনও রকমের আঁতাত করবে বা করতে যাবে, সে যে শুধু তার নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত হবে, তা নয়, বরং তার জানমালও বিপন্ন হবে। বেতার-টেলিভিশন-চলচ্চিত্র শিল্পীরা এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেবেন না। এই বিবৃতিতে সই করেন, লায়লা আর্জুমান্দ বেগম, আফসারী খানম, আতীকুল ইসলাম, ফেরদৌসী রহমান, মুস্তফা জামান আব্বাসী, গোলাম মোস্তফা, হাসান ইমাম, জাহেদুর রহিম, আলতাফ মাহমুদ, ওয়াহিদুল হক, এএম হামিদসহ আরও কয়েকজন। পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন এদিন তাদের জরুরি এক সভায় বাংলার জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানায়। ওই সভায় ৬ মার্চ সাংবাদিকদের মিছিল এবং বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণবিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।