
রমজানের প্রথম দিন জমে উঠেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতার বাজার। তবে গত বছরের চেয়ে ইফতার আইটেমের দাম তুলনামূলক বেশি। দুপুর থেকেই চকবাজারের শাহি মসজিদের সামনের রাস্তায় কয়েকশ দোকানি ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দুপুরের পর থেকেই ইফতার কিনতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করতে শুরু করে।
রোববার (২ মার্চ) সরেজমিন চক সার্কুলার রোডে দেখা গেছে শতাধিক ইফতারসামগ্রী বিক্রির অস্থায়ী দোকান বসেছে। সেখানে সব ধরনের ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছেন তারা।
ইতিহাস বলে, ঢাকার এই এলাকার ইফতারির এমন ঐতিহ্য ৪০০ বছরের বেশি। স্থানীয়দের মতে ৬৮ বছর আগে ১৯৪৫ সালে শাহী জামে মসজিদ চত্বরে বাণিজ্যিকভাবে এ খাবার বিক্রি শুরু করেন একজন বিক্রেতা। এখন বংশ পরম্পরায় তার ছেলেসহ অনেকে বিক্রি করছেন বিভিন্ন আইটেমের এসব ইফতারসামগ্রী।
বিক্রেতারা জানান, পুরো রমজানজুড়েই চকবাজারের ইফতারসামগ্রীর বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে। তারা ঐতিহ্যবাহী এসব ইফতারসামগ্রী কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে আসেন।
তবে ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকবাজারের ইফতারি ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তবে ঠিক কতখানি দাম বেড়েছে সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। কেউ বলছেন দ্বিগুণ দাম বেড়েছে, কেউবা বলছেন ২৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। পাশাপাশি খাবারের মান নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ আছে। ভেজাল, রঙ মেশানো, বাসি খাবারের অভিযোগ রয়েছে।
আব্দুল জব্বার নামক এক বিক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এই চকবাজারে দইবড়া বিক্রি করি। আব্দুল জব্বারের দইবড়া, খাইলে রাজা না খাইলে প্রজা। ৫ পিস ১৫০ টাকা, ১০ পিস ৩০০ টাকা। এছাড়া আমার এখানে বোরহানি, পেস্তা বাদামের শরবত আছে।
চকবাজারে রয়েছে, খাসির লেগ রোস্ট, আস্ত চীনা হাঁস রোস্ট, আস্ত চিকেন গ্রিল, আস্ত পাতি হাঁস ও গরুর সুতি কাবাব, চিকেন পরোটা, বিফ পরোটা, চিকেন রোল, গরুর কাবাব, খাসির জালি কাবাব, ডিম চপ, চিকেন মোমো, বাকলাভা, কিমা পরোটা, টান পরোটা, চিকেন সাসলিক, অ্যারাবিয়ান কাবাব, মুঠি কাবাব, হালিম, বটি কাবাব, দই বড়া, শাহী জিলাপি, সাধারণ জিলাপি, চিকেন চাপ, কোয়েল পাখির রোস্ট, টিক্কা, জালি টিক্কা, চিকেন কারি, বিফ কারি, শাহী পরোটা, সাদা পরোটা, সুতি কাবাব, কবুতর রোস্ট, চিকেন বটি কাবাব, চিকেন তন্দুরি, চিকেন লেগ, আলু পরোটা, ঘুগনি, ঘিয়ে ভাজা লুচি, কাশ্মীরি বটি কাবাব, চিকেন আচারী, শাহী তন্দুরি, কেশোয়ারি, তেহারি, কাচ্চি, মোরগ পোলাও, ডাবলিসহ কয়েকশত ইফতারি আইটেম। এছাড়া পেঁয়াজু, আলুর চপ, ডিম চপ, বেগুনি, চানা, ছোলা, মুড়ি, ইত্যাদিতো আছেই।
চকবাজারের বিখ্যাত ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ এর দোকান এবার খুব বেশি চোখে পড়েনি। মাত্র একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেখানে লোকজন কম। এক সময় চকবাজারের প্রধান আকর্ষণ এখন তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে অনেকটাই।
এছাড়া পানীয়ের দিক দিয়ে রয়েছে, শরবত-ই মোহাব্বত, মাঠা, ঘোল, লাবাং, বোরহানি, পেস্তা বাদামের শরবত বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে মালপোয়া, পাটিসাপটা, ফালুদা, ফিরনি জর্দা (বক্স) ইত্যাদি।
রাজধানীর চকবাজারে ঐতিহ্যবাহী ও খানদানি ইফতার কিনতে আসা মুনতাসির নামে একজন ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছরই চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা হয়। রোজার আগে থেকেই প্ল্যান থাকে ইফতার পার্টির ইফতার আমরা চকবাজার থেকেই কিনব। আমরা চিকেন ঝাল ফ্রাই, চিকেন গ্রিল, ডিম চপ, কবুতর রোস্টসহ বিভিন্ন আইটেম খাবার কিনেছি। এছাড়াও বাজারটিতে রয়েছে অসংখ্য সুস্বাদু ইফতার আইটেম।
চকবাজারের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে ঢাকার বাইরের মানুষও ইফতারি কিনতে আসে। আসলে এখানে কিছু কিছু আইটেম থাকে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না যেমন: বড় বাপের পোলা, সুতি কাবাব, ডাবলি, চানা, শিক কাবাব, জালি কাবাব ইত্যাদি যা কেবল রমজান মাসেই এখানে পাওয়া যায়। অন্য অনেক জায়গায় হয়ত অনেক ভাল মানের ইফতারি পাওয়া যায় তবে চকবাজারের ইফতারির ব্যাপারটাই আলাদা।
তবে চকবাজারের ইফতারির সুনামের পাশাপাশি অভিযোগও আছে। সুমন তালুকদার নামক একজন ক্রেতা বলেন, চকবাজারের ইফতারি দেখতে সুস্বাদু মনে হলেও স্বাদ বেশি ভাল না। তাছাড়া যেসব ইফতারি আজ বিক্রি হবে না সেগুলো তারা কাল আবার বিক্রির জন্য উঠায়। ফলে বাসি খাবারের ঝুঁকি আছে।
এসআরএস/এমআইএইচএস