Status

পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে তীব্র হচ্ছে বাণিজ্য উত্তেজনা

আমেরিকা, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে তীব্র হচ্ছে বাণিজ্য উত্তেজনা। মঙ্গলবার থেকে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ৪ মার্চ থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে এবং এই নির্দেশ পেছানোর কোনও সুযোগ নেই। এর পাশাপাশি চীনা পণ্যের উপরও ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। গত বছর এই তিন দেশ থেকে মোট ৪০ শতাংশ পণ্য আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যা এ বছর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পর তা ব্যাহত হতে পারে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে চীন ও কানাডা। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্বের শীর্ষ অংশীদার এই তিন দেশ। বেইজিং জানিয়েছে, মার্কিন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে তারা। অন্যদিকে কানাডা ঘোষণা দিয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে। চীনের নতুন শুল্ক নীতি আগামী ১০ মার্চ থেকে কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা মুরগি, গম, ভুট্টা ও তুলার ওপর ১৫ শতাংশ এবং জোয়ার, সয়াবিন, শুকরের মাংস, গরুর মাংস, ফল, শাকসবজি, দুগ্ধজাত ও জলজ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক বৃদ্ধি বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। এক বিবৃতিতে দেশটির কাস্টমস ট্যারিফ কমিশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক বৃদ্ধি বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ক্ষতি করছে। আমেরিকান ব্যবসা ও ভোক্তাদের ওপর বোঝা বাড়ানোর পাশাপাশি চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার ভিত্তিকে দুর্বল করছে। ৪ ফেব্রুয়ারি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। যা এক মাস পর কার্যকর করা হচ্ছে। এর বিপরীতে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং বড় ইঞ্জিনের গাড়ি সহ অন্যান্য পণ্যের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য প্রায় ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকরের কথা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আর বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর আগামী ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের শুল্ক নীতি পরিবর্তন না করা পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। অপর এক খবরে বলা হয়, সোমবার বিকালে যুক্তরাষ্টসহ এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার দরে পতন হয়েছে। পাশাপাশি মেক্সিকান পেসো এবং কানাডিয়ান ডলারেরও পতন হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানিযোগ্য পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী এবং মাদক চোরাচালান রোধে উত্তর আমেরিকার ওই দেশ দুটির ওপর কঠোর শুল্কনীতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটাইলের মতো ভয়াবহ মাদক পাচার রোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়েছেন ট্রাম্প। সেটাও মঙ্গলবার রাত থেকে কার্যকর করা হয়েছে। ট্রাম্পের পূর্ব ঘোষিত এই শুল্ক নীতি বাস্তবায়ন হতে না হতেই বিশ্ববাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিনটি সূচকে বড় রকমের পতন হয়েছে। দিনের শেষে ডাও জোন্স ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালের পয়েন্ট কমেছে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এসএন্ডপি’র কমেছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নাসডাক কম্পোজিটের কমেছে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এছাড়া ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন মেগাক্যাপের একটি গেজ ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার বাজারেও এর ধাক্কা লেগেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে টোকিও, হংকং, সিডনি এবং ভারতের শেয়ার বাজারে। নিক্কেই বেঞ্চমার্কে কমেছে ২. ৪৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি টোকিওর টপিক্স সূচকে কমেছে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মঙ্গলবার ভারতের শেয়ার বাজারেও এশিয়ার অন্যান্য সূচকের মতো অবনমন হয়েছে। এমএসসিআই এশিয়া এক্স-জাপানের কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। বৈশ্বিক শেয়ার বাজারে এমন ধাক্কা লাগায় বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। রয়টার্স, বিবিসি, এনডিটিভি, এনবিসি নিউজ।

Source link

Leave a Reply

Back to top button