পর্যটকশূন্য সেন্টমার্টিনে ফিরছে প্রকৃতির আসল রূপ


পর্যটকশূন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রকৃতির আসল রূপে ফিরতে শুরু করেছে। এখন সমুদ্র সৈকতেই দেখা মিলছে সামুদ্রিক বড় জোঁক, বেড়েছে শামুক-ঝিনুক, জাগছে প্যারাবন ও কেয়াগাছ। সমুদ্র সৈকতের পাশে উড়ছে পাখি, দেখা মিলছে লাল কাঁকড়া। সমুদ্রের পানি এখন স্বচ্ছ নীল রং ধারণ করেছে।

জানা গেছে, সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধের ফলে দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া এখন কারো উপস্থিতি সেন্টমার্টিনে নেই। এতে করে সৈকতের চারপাশে জাগছে প্যারাবন ও কেয়াগাছ, সৈকতের বালুচরে দেখা মিলছে ঝিনুক। সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে আসছে শামুক। দেখা মিলছে লাল কাঁকড়ার। সামুদ্রিক বড় জোঁকের দেখাও মিলছে।

এ বছর পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে দুই মাস দুই হাজার পর্যটক ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। বিগত বছরে ৪-৫ মাসে প্রতিদিন পাঁচ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম মেম্বার বলেন, পর্যটকশূন্য প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৈকতের কাছে পানিতে এখন দেখা মিলছে সামুদ্রিক জোঁক। সৈকতের বালুচরে দেখা মিলছে শামুক-ঝিনুকের বিচরণ এবং লাল কাঁকড়ার। কেয়াগাছ ডালপালা মেলতে শুরু করছে। দ্বীপে যেন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। প্রকৃতির এমন পরিবর্তনে দ্বীপের সৌন্দর্য বাড়ছে।

কিন্তু সেন্টমার্টিনের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। এ বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসের আয় দিয়ে আগামী বছর পর্যন্ত খরচ জোগাড় করা তাদের জন্য কঠিন হচ্ছে। তবুও অনেকেই বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। সাগরে মাছ ধরছেন। দ্বীপে যাদের হোটেল রেস্টুরেন্ট ছিল তাদের অনেকেই এখন টেকনাফ ও কক্সবাজারে গিয়ে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট করার চেষ্টা করছেন।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, বিগত বছর পর্যটন মৌসুমের সময় রেস্টুরেন্টে ব্যবসা করে ভালো টাকা আয় করেছি। দোকানের কর্মচারীদেরকে ভালো বেতন দিতে পেরেছি। এ বছর দুই মাস পর্যটক এসেছিল দ্বীপে। তাও খুব কম সংখ্যক, এই দু’মাসের আয় দিয়ে দোকানের কর্মচারীর বেতন পর্যন্ত ঠিকমতো দিতে পারিনি। এখন টেকনাফ চলে এসেছি, একটা রেস্টুরেন্ট করার চেষ্টা করছি।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা হায়দার আলী নামে এক যুবক বলেন, পর্যটকশূন্য দ্বীপটিতে প্রকৃতির আসল রূপ ফিরতে শুরু করেছে। সৈকতের বালুচরে মানুষের চলাচলের কারণে শামুক-ঝিনুক ও লাল কাঁকড়ার বিচরণ নষ্ট হয়ে যেতো। সৈকতের কাছে ও বালুচরে এবং কেয়াগাছের পাশে পড়ে থাকতো প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় প্যাকেট। এখন পর্যটকশূন্য দ্বীপে সৈকতে স্থানীয়দের তেমন আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় না। দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ বিকেলের দিকে জেটিঘাট ও বাজারে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়।

তিনি বলেন, গত মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুইদিন বর্জ্য পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তখন থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়ে না। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সমুদ্রের পানি এখন স্বচ্ছ নীল রং ধারণ করেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছে একাধিক ড্রোনের মাধ্যমে বর্জ্য পড়ে থাকার স্থান শনাক্ত করে। পরে ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি দুইদিনে ৯৩০ কেজি বর্জ্য অপসারণ করা হয়। অপসারিত বর্জ্যের ৯০ শতাংশই ছিল চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট ও পলিথিন।

কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকমের সহকারী প্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনে এ বছরের পর্যটক সীমিতকরণে দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশের উন্নতি ঘটেছে। সৈকতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় না থাকায় মা কাছিম সৈকতে ডিম ছাড়তে আসে, দেখা মিলছে লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকের বিচরণ। সৈকতের বালুচরে ঝিনুকগুলো খুব সুন্দর করে পড়ে রয়েছে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Exit mobile version