পদত্যাগের কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার দিকে আঙ্গুল তুললেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। গত সন্ধ্যায় তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে কী কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন, পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেননি। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত আছি। অদ্য ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা গ্রহণ করছি। পরবর্তীতে তিনি এক বিবৃতিতে পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, উপদেষ্টা (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন (আসিফ নজরুল) সংস্কৃতি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন সম্বলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকা-কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। উদহারণ হিসেবে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্ত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। তিনি কাজ করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন। তিনি বলেন, আমাকে আদিবাসী কথাটা বলতে বাধা দিয়েছিল, আমরা আদিবাসী কথাটা বলতে পারব না। আমি আজকে বলছি, আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক। তাদের অধিকার অর্জিত হোক। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম হোক। আনাসের মতো শহীদের রক্ত যেন সার্থক হয়। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বুঝুক, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তাদের ব্যাপক কর্মকা-ের জন্য বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে প্রচুর নাট্যচর্চা হচ্ছে, সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ আসলেই সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখন সঠিক সময় বলে মনে করি, আর বোধ হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে। উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন নাট্যনির্দেশক ও গবেষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পকলার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ শিক্ষক হিসেবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তবে শিক্ষকতা আর প্রশাসনিক কাজ এক জিনিস নয়। তিনি প্রশাসনিক কাজে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি প্রশাসনের সকলকেই ছাত্র মনে করতেন। আসলে, যার যে কাজ, তাকে সে কাজ করতে দিতে হয়। তিনি শিক্ষক হিসেবে সফল, তবে প্রশাসক হিসেবে সফল হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। হয়তো তিনি বুঝেছিলেন, এটি তার কাজ নয়। তাই পদত্যাগ করেছেন।