
নির্বাসিত নক্ষত্র
নিভে কালেরও বাতি, আঁধারেরা জোড়ে ডানা
শুকনো পাতায় ধ্বনি পায়ের, স্মৃতির সুলতানা
স্বপ্ন ছিল সোজা নদী, বয়ে যেত নিঃশব্দ
শৃঙ্খলার মোড়ে বাঁধে তাকে সময়ের দুর্ঘট
তবুও শিরে অগ্নিশিখা, বুকেরই মাঝে বীণা,
যুগে যুগে বলবে কাহন, যত যা-ই হোক লীলা
কৃষ্ণ রাতে আঁকা চিত্র, ধুলো ঢাকা মর্ম
তবুও চেনা ইতিহাসে লিখবে সময় ধর্ম
চালাক বুলির কারুকাজে পুঁথি হলো ক্ষয়
লুটলো দু’হাত ভরে যারা তাদেরই কি জয়?
তবু জ্বলে রক্তের অক্ষর শ্বেত-শিলালিপি
ধোঁয়াশার নগরীতে স্বপ্নের প্রতীপ জ্বলি।
****
নিভৃত আলোয়
নিভৃত আলোয় দোদুল্যমান সন্ধ্যাতরঙ্গ,
শব্দহীন বেদনায় অকণ্ঠ সংগীত
নীরবতার ছায়ায় ভাসে চেতনার ছায়াপথ,
অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবির মতো স্মৃতির দিগন্তসড়ো।
কাচঘেরা বাস্তবতা আমি অদেখা ছায়াপাত,
নিঃশব্দ ভাষায় বলি অভিপ্রকাশের নিস্তব্ধতা।
কেউ কি শুনবে? কেউ কি ছোঁবে?
নাকি রয়ে যাবো শুধু অস্বীকৃত প্রতিধ্বনি?
মুখোশ আড়ালে লুকিয়ে থাকা অনুভবের-নকশা,
যেখানে সংযোগ মানে শুধু আলো-আঁধারের রং।
আমি কি রঙিন? নাকি শুধু অসঙ্গত বিমূর্ততা?
অথবা নিঃসঙ্গ এক আত্মার নক্ষত্রগঙ্গা?
হয়তোবা একদিন কেউ দেখবে আমায়,
সত্যিকার চোখে, অলেখার ব্যঞ্জনায়।
সেদিন হয়তো মিলবে অধর-কাব্যেরই গান,
ততক্ষণ থাকি, দীপজ্বালা নিভৃত সন্ধ্যায়।
****
অগ্নিদগ্ধ আলো
অগ্নি জ্বেলে গ্রন্থ বুনেছি, স্রোতের বাঁকে ছায়া
বাতাসে সরল বীজ কাড়ে, নেই বাঁচার উপায়
পদ্ম-পলে চোখেরই শিখা, ক্ষয়ে গেছে রং
কালেরই কাঁধে টিকে থাকা প্রতিদিনের সংজ্ঞা
মাটিপৃষ্ঠে দাগ কাটে দুঃখের অক্ষর
সময়ের ফালি ফালি ছেঁড়া শতাব্দীরই উজর
পাথরকে ছুঁয়ে কাঁদে যারা, ওরা নদীর জোয়ার
ঝুলছে শেকড় ধরে শুধু ভগ্ন ঘরেরই দ্বার
মুছে যাবে সত্য, তবু প্রতিধ্বনি জাগে,
ধুলো ঢাকা স্মৃতির পাতায় নক্ষত্রের লাগো
পড়বি কালের পোড়া পুঁথি, শোনা যাবে গান,
দগ্ধরাত তপস্যাতে ফুটবে ভোরের প্রাণ।
****
সুখপ্রতিমা
সময়ের তরী বয়ে চলে, দুঃখস্রোতে ভেসে যাচ্ছি…
আশারই বাতি জ্বলে ক্ষণে ক্ষণে, কেউ কি তার আলোকে টানে?
সততার বৃক্ষ শুকে মরে, তবু নীতি ছায়া ফেলে
স্বার্থজালে বন্দি প্রতিদিন, দুঃখবাঁশি সুর তোলে
বিরহের নদী বয়ে চলে, মাঝির মেলে না দেখা
আলো-ছায়ার পথিক কাঁদে, সত্য দরজা খোলে না
সংঘর্ষের কুয়াশা ঘিরে ধরে, অন্ধকার পথ ভাসে
অপেক্ষার দীপ টিমটিম করে, হারানো সময় হাসে
ভালোবাসার আকাশ আজ শূন্য, তারার চোখও ঝরে
সন্ত্রাসী বাতাস ছুটে আসে, সুখের ঘরও পোড়ে
স্বপ্নবালুচর ভেসে যায়, বিশ্বাস থাকে না চিরকাল
মায়াসেতু দুলতেই থাকে, ভাঙনের সুর দেয় ছন্দকাল
পৃথিবীর মঞ্চে সবাই অতিথি, কাঁদে আর হাসে অভিনয়ে
সময়ঝড়ে ভাসিয়ে নেয় সব, সত্য তবু রয়ে যায় জয়ে
সুখপ্রতিমা মানুষ গড়ে, শেষমেষ ধুলায়ই মেশে
শেষ বিদায়ের রথে চড়লে, কেউ কি আর ফিরে আসে?
এসইউ/জিকেএস