Status

নির্বাচন-দলীয় শৃঙ্খলার বার্তা দেবে বিএনপি

দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি। দল ও দলের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে সে লক্ষ্যে কাজও করাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর লাগাতার কর্মসূচি পালন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, প্রার্থী হতে আগ্রহীদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান ও কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ফলে ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে আজ দীর্ঘ ৭ বছর পর ঢাকায় ডাকা হয়েছে বিএনপির বর্ধিত সভা। জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের এলডি হল ও মাঠে এ সভা হবে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের প্রায় চার হাজার নেতা অংশ নেবেন। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দিনব্যাপী বর্ধিত সভায় জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকবৃন্দ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব সদস্য উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সব জেলা ও মহানগরীর সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, মহানগর ও জেলাধীন সব থানা, উপজেলা ও পৌর কমিটির সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিলেন ও মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পেয়েছিলেন তারাও এ সভায় অংশ নেবেন।

এর আগে বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল লো মেরিডিয়ানে। ওই সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেন।
দলটির একাধিক নেতা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বর্ধিত সভায় অংশ নেয়া নেতাদের বক্তব্য শুনবেন, তাদের বক্তব্য, অভিযোগ, পরামর্শ শোনার পর দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রাখা, জনগণকে সম্পৃক্ত করা, তাদের সমর্থন আদায় এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একগুচ্ছ বার্তা দেবেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি উঠেছে, সেটাকে খুব গুরুত্ব দেবে না বিএনপি; বরং দলটি জাতীয় নির্বাচনকে মুখ্য করেই পরবর্তী সাংগঠনিক কর্মসূচি তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের পরপরই নির্বাচনকেন্দ্রিক এ কর্মসূচি ও তৎপরতা শুরু হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের কারণে গত ১৫-১৬ বছর সাংগঠনিক তৎপরতা ও গোছানোর কাজটি ঠিকমতো করতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর তৃণমূলে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছি। যার কারণে বর্ধিত সভা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সভায় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। যা নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করবে। এ মুহূর্তে যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সভা সফল করতে বর্ধিত সভা ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্ধিত সভা নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের নেতারা কী ভাবছেন, বর্ধিত সভা থেকে তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। সেই নিরিখে তৃণমূলকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম দলের প্রথম নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা আহ্বান করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখান থেকে মাঠপর্যায়ের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সামাজিক ও অর্থনীতি অবস্থা সম্পর্কে সবার কাছ থেকে ধারণা নিতে চান। তিনি বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বাংলাদেশ নিয়ে দেশি-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ের ষড়যন্ত্র চলছে। সেখানে করণীয় কী, তা নিয়ে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে বর্ধিত সভাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় ৭ মাস হতে চললেও এখনো নির্বাচন নিয়ে নানা ধরণের কথা-বার্তা আসছে সরকারের বিভিন্ন জনের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে আগে জাতীয় নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে সে ইস্যুতেও বেশ বিতর্ক চলছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক কমিটির। বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁরা সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে ইতোমধ্যে দেশবাসীর সামনে দুটি বিষয় পরিষ্কার করেছেন। একটা হচ্ছে, জরুরি সংস্কারগুলো কী কী সেটা স্পষ্ট করা এবং এ ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করে দ্রুত নির্বাচন আদায় করা। এর বিনিময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। এরপর নির্বাচিত সরকারই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় বাকি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে। এমন নীতিগত অবস্থান নিয়েই বিএনপি তার নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কিছু মৌলিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসছে। বিএনপি ছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটের শরিক দলগুলোও চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। মানুষ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের জন্য। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের বাইরে অন্য কোনো নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। এই সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে সংস্কার করে ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকরের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এর বাইরে অন্য কোনো নির্বাচন করতে হলে ম্যান্ডেট নিতে হবে জনগণের কাছ থেকে।###

 

Source link

Back to top button