নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার দাবী জুলাই মঞ্চের

গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার, বিচার ও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ হতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে জুলাই মঞ্চ। ১৭ দিন গত হলো, এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সারকারের কোন ভ্রুক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার। সরকারের এমন অনীহার ব্যাপারে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছে জুলাই মঞ্চ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই অসন্তোষের কথা জানান।

 

গণহত্যার স্পস্ট প্রমাণ থাকার পরেও যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বিচারের ধীরগতি আমাদের মনে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। পাশাপশি দেখা যাচ্ছে, চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারে বিশেষ কোন উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ৬২৬ জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সহ ভারতে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রমেরও কোনো উন্নতি নেই। যা গণ অভ্যুত্থানে ২০০০ শহীদের আত্মত্যাগকে অস্বীকার করার শামিল। গণহত্যার বিচার না পাওয়া গেলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবন ভবিষ্যতেও অরক্ষিতই থেকে যাবে। আমরা আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার দাবী করছি।

 

 

৭ মাস আমরা সময় দিয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম এই ৭ মাসে আমরা আমাদের শহীদের আত্মাকে শান্ত করতে পারবো গণহত্যাকারীদের বিচার করার মাধ্যমে। কিন্তু এতদিন পার হবার পরেও সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধ। গণহত্যার বিচার আগে হতে হবে, তারপর সংস্কার বা নির্বাচন, যা ইচ্ছা করুন। বাংলাদেশে গণহত্যা হবে আর বিচার হবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আমাদের নাগরিক দায়িত্ববোধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শাহবাগে অবস্থান করছি।

 

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে সুস্থ ধারার রাজনীতি কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের একটি বড় সুযোগ এসেছে লাশের রাজনীতি বন্ধ করে আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মান করার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সকল রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আহাবান জানাচ্ছি। বিপ্লবকে নসাৎ করতে দেশে-বিদেশে নানা চক্রান্ত চলছে। ২৪ এর গণ অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল কেবল ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ঐক্যের ফলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অন্তবর্তি সরকারের অপ্রত্যাশিত কিছু ব্যর্থতার কারণে সেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। এই অনৈক্যের সুযোগে দেশ আবার ঝুকির মুখোমুখি হতে পারে বলে গভীর আশংকা রয়েছে। জুলাই মঞ্চ গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যের জন্য অবিরত কাজ করে যাবে।

 

গত জুলাই-আগস্ট ২০২৪ যে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেটি সংঘটিত হয়েছিলো বাংলাদেশ বনাম আওয়ামীলীগের মধ্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক অধিকারকে বিকিয়ে দিয়ে আওয়ামীলীগ বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশে দুঃশাসন চালিয়েছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর যুদ্ধ ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ীদের সমস্বরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, বাংলাদেশ বিরোধী এই গণহত্যাকারী চক্রের শাস্তি কিভাবে নিশ্চিত করবে এবং তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে কিনা। জুলাই মঞ্চ তার নাগরিক দায়িত্ব থেকে গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের আমরা গণহত্যার বিচার ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে নিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ তোলার আহবান জানাই।

 

জুলাই বিল্পব এখন বিপন্ন হতে বসেছে নানা ভাগে বিভক্ত হয়েছে। বিপ্লবের পরাজিত শক্তি বিগত ১৬ বছর স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকদের উপস্থাপন করে বিভাজিত করে রেখেছিলো। এই বিভাজনের রাজনীতির সুযোগ আমরা আর কাউকে দিতে চাইনা। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাংলাদেশের সকলকে নিয়ে জুলাই বিপ্লবে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই।

Source link

Exit mobile version