নিজের দালান বাড়ি তবুও পেয়েছেন সরকারি ঘর


 

জয়পুরহাটে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন বিত্তবান ও একই পরিবারের লোকজন। ঠিকভাবে বরাদ্দ না দেওয়ার কারণে প্রকল্প এলাকার ভূমিহীন ও দরিদ্র পরিবার থাকলেও তারা ঘর বরাদ্দ পাননি। অভিযোগ রয়েছে, প্রথম দিন চাবি আর জমির কাগজ নিতে এসেছিল সবাই। আর কোনো দিন আসেনি। বরাদ্দ পাওয়া সেই ঘরে নাম লেখা বোর্ড নেই। তাই সবার নামও জানেন না বসবাসরতরা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলীম। তিনি নিজের দালান বাড়িতে বসবাস করেন। কিন্তু তার নামে ঘর বরাদ্দ রয়েছে পাথুরিয়ার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তেমনি বেলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির নামে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প ও দোগাছি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ রয়েছে তিনটি বাড়ি। এভাবেই সারি সারি আধাপাকা টিনের ঘর। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানে ১৪টি ঘরের মধ্যে ৫টিতে বসবাস করছেন উপকারভোগীরা। দখলে থাকা ৯টি ঘরে বসবাস না করায় এখন ফাঁকা ঘরে ঝুলছে তালা।

আরও পড়ুন

নষ্ট হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। অনেক বিত্তবান কোনো ঘরে পালন করছেন মুরগি। রাখছেন গৃহস্থালির সরঞ্জামাদি।

বরাদ্দ পাওয়ার পরও অনেক ঘর পড়ে আছে এভাবে-ছবি জাগো নিউজ

সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা মনোয়ারা বেগম জাগো নিউজকে বলেন,
আমাদের এখানে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের অনেককেই আমরা চিনি না। অধিকাংশ ঘরে বসবাস না করায় সব সময় ঝুলে থাকে তালা। মাঝে মধ্যে অচেনা ব্যক্তিরা এসে কিছু সময়ের জন্য ঘরে থেকে চলে যায়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমরা চাই যেসব ঘরে কেউ থাকে না, সমাজের মধ্যে যারা অসহায় গরিব রয়েছে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হোক।

শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গাফুর জাগো নিউজকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে আমার জমি রয়েছে, আমাকে সেখানে নিয়মিত যেতে হয়। গিয়ে দেখি ১৪টি বাড়ির মধ্যে তিন-চারটি পরিবার বসবাস করে, বাকিগুলোতে তালা ঝুলানো থাকে।

২০২২ সালে মেম্বার আমাদের একটা বাড়ি দিয়েছেন, আমার ছেলে কিছুদিন সেখানে ছিলেন এখন আমার ছেলে ঢাকায় চাকরি করে, তাই আমি সেই ঘরে মুরগি পালন করছি।

তিনি বলেন, এগুলো ফেলে না রেখে এলাকায় তো আরও গরিব দুঃখী রয়েছে তাদের দিয়ে দিক সরকার।

জেলার অন্যান্য এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, একই অবস্থা জেলার সব আশ্রয়ণ প্রকল্পে। বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলোতে নাম লেখা বোর্ড না থাকায় প্রকৃত মালিক না চেনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা।

ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন বিত্তবানরাও-ছবি জাগো নিউজ

আরও পড়ুন

প্রকল্পে ঘর নিয়েছে অথচ সেখানে না থেকে নিজের দালানের ঘরে থেকে প্রকল্পের ঘরে মুরগি পালন করছেন আব্দুল আলিম নামের একজন। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ২০২২ সালে মেম্বার আমাদের একটা বাড়ি দিয়েছেন, আমার ছেলে কিছুদিন সেখানে ছিল; এখন আমার ছেলে ঢাকায় চাকরি করে, তাই আমি সেই ঘরে মুরগি পালন করছি।

সুবিধাভোগীরা কেন থাকছে না এবং বরাদ্দপ্রাপ্তদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে আর একটি তথ্য পাওয়া গেছে, একই এলাকার বেলাল নামের এক পরিবারের নামে দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে তিনটি ঘর রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাই বেলালের স্ত্রী বলেন, আমার ছেলের নামে একটি ও মেয়ের নামে একটি। আমরা এখানে থাকি। তিনি বলেন, আমার ছেলেমেয়ে এখন ঢাকায় থাকায় সেই ঘরগুলো তালা দেওয়া। আমরা সেখানে মাঝেমধ্যে যাই। আমরা তো ভূমিহীন তাই এসব ঘর নিয়ে থাকি।

দূর থেকে দেখা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো-ছবি জাগো নিউজ

জয়পুরহাট জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আব্দুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ঘর বরাদ্দের কাজগুলো করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। তারা শুধু ঘর নির্মাণে সহায়তা করেছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিপুল কুমার জাগো নিউজকে বলেন, সুবিধাভোগীরা কেন থাকছে না এবং বরাদ্দপ্রাপ্তদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এএমইউএন/এসএইচএস /এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Exit mobile version