
বাংলাদেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব বিকল্প চামড়া তৈরি করেছে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সাদিয়া।
সোমবার (৩ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জের রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদিয়ার তৈরি করা এই সাফল্যের আন্ডারগ্রাজুয়েট গবেষণা পত্রের ডিফেন্স সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সাদিয়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের ফাইনাল সেমিস্টারের ছাত্রী। ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীতের তত্ত্বাবধানে ইসরাত ভেগান লেদার তৈরি করে। এই ভেজিটেবল লেদার তৈরি করতে ইসরাত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সবজি ও ফলের এক্সট্রাক্ট ও কেমিকেলের মিশ্রণে, যা সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য। মূলত ঘরোয়া ভাবেই বিটরুট, কফি ও কয়লার থেকে বিভিন্ন অনুপাতের রাসায়নিক মিশ্রণ করে এই ভেগান লেদার তৈরির সাফল্য পান তিনি।
এই লেদারটি শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং চামড়া শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
সাদিয়ার গবেষণা ও উদ্ভাবনের ফলে দেশের ফ্যাশন ও টেক্সটাইল শিল্পে টেকসই পরিবর্তন আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাঁর উদ্ভাবিত এই লেদার পশুর চামড়ার বিকল্প হিসেবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এ বিষয়ে ইসরাত জাহান সাদিয়া বলেন, আমি সবসময়ই পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। এই ভেজিটেবল লেদার প্রকৃতির ক্ষতি না করেই উচ্চমানের বিকল্প দিতে সক্ষম। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সবজি ও ফলের রস থেকে চেষ্টা করে অবশেষে বিটরুট, কফি ও কয়লায় আমার কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়েছি। এই তৈরিকৃত লেদার নিয়ে আমি ভবিষ্যতে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে। এই তৈরিকৃত লেদার থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ ও জুতা প্রাথমিকভাবে তৈরি করার প্রয়াস করেছি। আমার লক্ষ্য এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা এবং বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়িত্বশীল পরিবর্তন আনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের প্রধান তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার ফলেই এমন চমৎকার আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও আন্ডার গ্রাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের প্রেজেন্টেশনের দিন উপস্থিত ছিলেন রঙ বাংলাদেশের ডিজাইনার ও প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস। তিনি এই ধরনের গবেষণার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণায় উদ্যোগী হওয়ার জন্য বলেন।
আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ও ডিজাইন বিভাগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ যদি শিক্ষার্থীদের এভাবেই অনুপ্রেরণা দেয় তবে প্রতিটি শিক্ষার্থীই তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে ও গবেষণায় ভালো ফলাফল করবে। আন্ডারগ্রাজুয়েট গবেষণাপত্র কোর্সের প্রেজেন্টেশনের দিন আরও উপস্থিত ছিলেন আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি. আর. আই.-এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. তরিকুল ইসলাম। গবেষণার মান ও কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিভাগের সাফল্য কামনা করেন।
এছাড়াও আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের এমন সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে উৎসাহিত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।