নওগাঁয় সাড়া ফেলেছে রাকিবুলের মাছের শিঙাড়া

শিঙাড়া পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। সাধারণত রাস্তার পাশে বা হাট-বাজারের দোকানে আলু, বিভিন্ন সবজি বা গরু-খাসির কলিজার শিঙাড়া পাওয়া যায়। তবে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয় ব্যতিক্রমী এক দোকান খুলেছেন রাকিবুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি তৈরি করছেন মাছের শিঙাড়া। এর পাশাপাশি তার দোকানে মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু রোল ও মোগলাই। যা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে জেলাজুড়ে। প্রতিদিন তার দোকানে মাছের শিঙাড়া ও রোল খেতে ভিড় করছেন ভোজনরসিক মানুষরা। দেখতে আলু-শিঙাড়ার মতো হলেও এটি মাছ দিয়ে তৈরি। তাই এর নাম মাছের শিঙাড়া।
নওগাঁর বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর ইউনিয়নের দাড়িশন গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে রাকিবুল হাসান। তিনি পাহাড়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরার জন্য ২০১৮ সালে পাহাড়পুর বাজারে হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় তার দোকানে ভাত, মাছ, মাংস, পরোটা, খিচুড়ি, পিয়াজু ও আলুর শিঙাড়াসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যেত। এরপর ২০২৪ সালে মাছ দিয়ে কিভাবে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার তৈরি করা যায় তার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর খাবারের তালিকায় যুক্ত করেন মাছের শিঙাড়া, মাছের রোল ও মাছের মোগলাই। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ পিচ শিঙাড়া বিক্রি হলেও ভোজন রসিকদের পছন্দ হওয়ায় মুখরোচক এ খাবারটির চাহিদা বেড়ে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ পিচ শিঙাড়া বিক্রি হয়। পাশাপশি প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ পিস রোল ও ৪০ থেকে ৫০ পিচ মোগলাই বিক্রি হয়। এসব খাবারে তার প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ৭ থেকে ৮ কেজি পাঙাশ, তেলাপিয়া ও জাপানিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এক কথায় যে মাছের কাটা কম সে মাছ দিয়ে এসব খাবার তৈরি করা সহজ হয়। শিঙাড়া তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে রাকিবুল হাসান বলেন, মাছ কাটার পর ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এরপর সিদ্ধ করে কাঁটা বেছে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে সেগুলো মসলায় কসিয়ে তেলে ভেজে শিঙাড়া, রোল ও মোগলাই তৈরি করা হয়। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে তার বেচাকেনা। প্রতি পিস শিঙাড়া ১০ টাকা, রোল ২০ টাকা, মোগলাই ৮০ টাকা করে। পাশাপাশি ডিমের চপ, বেগুনি ও পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। বর্তমানে তার দোকানে কর্মচারীর সংখ্যা ৬ জন। আগে যেখানে প্রতিদিন বেচাকেনা হতো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বর্তমানে সেখানে বেচাকেনা হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সবকিছু বাদ দিয়ে মাসে তার আয় হয় প্রায় লাখ টাকা।
শিঙাড়া খেতে আসা আব্দুল করিম ও সালমান আলী বলেন, শিঙাড়া খেতে এসে দেখি রাকিবুলের দোকানে প্রচুর ভিড়। ভাজার মাত্রই শেষ। ব্যবসার খাতিরে মাঝে মধ্যে এ রাস্তা দিয়ে জয়পুরহাটে যেতে হয়। লোভ সামলাতে না পেরে মাছের শিঙাড়া খেতে হয়। পাহাড়পুর প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা মুন্নজান বলেন, জীবনে অনেক শিঙাড়া খেয়েছি; কয়েকদিন আগে বাচ্চারা বলছিল রাকিব চাচার দোকানে মাছের শিঙাড়া পাওয়া যায়। তাই খতে আসলাম। মাছের রোল ও শিঙাড়া খেলাম খুবই ভালো লেগেছে। মৌসুমির মৎস্য কর্মকর্তা শাহারিয়া হোসেন বলেন, পিকেএসএফ এর সহায়তায় জেলায় একমাত্র মৌসুমী এই প্রকল্পটি চালু করায় জেলায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বর্তমানে রেডি টু ইট ফিশ প্রোডাক্ট আমাদের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। অনেক পরিবারের ছোট বাচ্চারা মাছের কাঁটা বা গন্ধের কারণে মাছ খেতে চায় না। রেডি টু ইট ফিশ সম্পূর্ণ গন্ধমুক্ত, কাঁটামুক্ত এবং পুষ্টিমান অক্ষুণœ থাকায় সব বয়সের মানুষ এটা সহজেই খেতে পারে।

Source link

Exit mobile version