Facebook Bio Status

দাঁতের যত্নে এই কাজগুলো করছেন কি?


ওয়াকারুন নেসা মীম

দাঁত ব্যথা হলে অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে থাকেন। এসব ওষুধ সাময়িক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে দাঁতের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। দাঁতে ক্যাভিটি (গর্ত) কিংবা ক্যারিস (দন্ত ক্ষয়) সমস্যাজনিত অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করেন। এতে অনেক সময় একটা ছোট ক্যাভিটি কিংবা ক্যারিস থেকে দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে পারে।

তাই সময় থাকতেই দাঁতের চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন, দাঁতের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তবে সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসা নিলে কম খরচে সমাধান করা সম্ভব। তাই দন্ত চিকিৎসায় অবহেলা না করে বছরে অন্তত দুইবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।

কীভাবে ব্রাশ করছেন
সকালবেলার নাস্তার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এটি ছোট ও বড় সবার জন্যই প্রযোজ্য। অনেকে ভুল পদ্ধতিতে ব্রাশ করে থাকেন। এতে দাঁতের ক্ষতির হয় বেশি। সঠিক নিয়মে ব্রাশ না করার কারণে দাঁতের মাড়ি নেমে বা সরে যায়। সে ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে ব্রাশ করার বিকল্প নেই।

ব্রাশ করার সময় ওপরের দাঁতগুলোকে ওপর থেকে নিচে এবং নিচের দাঁতগুলোতে নিচের থেকে ওপরে আলাদাভাবে পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন দাঁতের সব দিক (ভেতর-বাহিরে এবং পেছনের দাঁতের উপরিভাগ) ব্রাশের সংস্পর্শে আসে। তিন মাস পর পর টুথ ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। টুথব্রাশটি হতে হবে নরম ব্রেসেলযুক্ত। আর ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে।

স্কেলিং কখন করবেন
ডেন্টাল স্কেলিং একটি চিকিৎসাপদ্ধতি। যার মাধ্যমে দাঁতের উপরিভাগ এবং মাড়ির ওপর ও ভেতরে জমে থাকা ‘ডেন্টাল প্লাক’ বা ‘দন্তপাথুরি’ পরিষ্কার করা হয়। ডেন্টাল প্লাকে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়াগুলো ‘মাড়ির প্রদাহ’ বা ‘জিনজিভাইটিস’ তৈরি করে থাকে।

সঠিক নিয়মে ব্রাশ না করলে দাঁতের গোড়ায় ক্যালকুলাস বা পাথর জমা হয়। যা পরে মাড়ি প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়। কারণ ব্রাশ কিংবা ফ্লসের মাধ্যমে যে খাবারগুলো বের হয় না; সেসব খাদ্যকণা ও লালায় থাকা জীবাণু এবং কিছু প্রোটিন দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে জমতে জমতে শক্ত পাথরে মতো হয়ে যায়। যেটি ব্রাশের মাধ্যমে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। তখন স্কেলিংয়ের প্রয়োজন হয়। এটি খাদ্যাভ্যাসের কারণেও হতে পারে।

মুখে দুর্গন্ধ হলে করণীয়
মুখে দুর্গন্ধ হলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ব্রাশ করার পরও ছোট খাদ্যকণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকতে পারে। যা পরে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করে। তাই দাঁত আরও বেশি সুরক্ষিত রাখতে এবং দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে ব্রাশ করার পর ‘ডেন্টাল ফ্লস’ ব্যবহার করতে হবে। ব্রাশ করার পরেও দুই দাঁতের মাঝে (ইন্টার ডেন্টাল স্পেস) যে ফাঁকা জায়গা থাকে, সেখানে খাবার কণা জমা থাকতে পারে।

তাই ফ্লস ব্যবহার করার মাধ্যেম সেই ছোট ছোট খাবার কণা বের করে আনা যায়। তাছাড়া ব্রাশ বা আঙুল দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। আপনি কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মুখ শুষ্ক হলেই দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মুখে দুর্গন্ধ এড়াতে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারে। তবে দীর্ঘদিন মাউথওয়াশ ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। এটি জীবাণুরোধী দ্রবণ হিসেবে কাজ করবে।

স্কেলিং নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা
স্কেলিং সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা আছে। স্কেলিং করলে দাঁত শিরশির করে, দাঁত নড়ে যায়, দাঁত ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায়। আদতে স্কেলিং করার পর দন্তপাথুরি পড়ে যাওয়ার কারণে দাঁতে কিছুদিন শিরশির হয়। কারণ দীর্ঘদিন পর দাঁতগুলো উন্মুক্ত হয়। তবে এ শিরশিরভাব সাত দিনের মধ্যেই চলে যায়।

দাঁতের ক্ষয় রোধে খাবারের ভূমিকা
সাধারণত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার দাঁতের জন্য ভালো। খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি ও ফল-মূল রাখতে পারেন। খুব বেশি গরম কিংবা খুব বেশি ঠান্ডা খাবার দাঁতের জন্য ভালো নয়। তাই গরম খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানীয়ের অভ্যাস বাদ দিন। অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার কিংবা কোল্ড ড্রিংকস ও ফাস্টফুড দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব খাবার যত সম্ভব পরিহার করতে হবে।

লেখক: বিডিএস, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং দন্ত চিকিৎসক, টিথ ডেন্টাল কেয়ার।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Leave a Reply

Back to top button