থাইল্যান্ডের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ৪০ উইঘুরকে চীনে ফেরত, যুক্তরাষ্ট্র-জাতিসংঘের নিন্দা

থাইল্যান্ড সরকার কমপক্ষে ৪০ জন উইঘুর মুসলিমকে চীনে ফেরত পাঠিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছিল যে, ফেরত পাঠানো হলে এই উইঘুররা চীনে নির্যাতন ও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন। এরপরও থাই কর্তৃপক্ষ এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়েছে।

 

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ব্যাংককের একটি আটক কেন্দ্রে এক দশক ধরে বন্দি থাকা এই উইঘুরদের একটি চার্টার্ড বিমানে করে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সেখানে চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে তাদের কঠোর নিপীড়নের আশঙ্কা রয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে।

 

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক এই পদক্ষেপকে “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত থাইল্যান্ডের দীর্ঘদিনের মানবাধিকার রক্ষার ঐতিহ্যের পরিপন্থি এবং আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, উইঘুরদের আশ্রয় দেওয়া উচিত, তাদের জোরপূর্বক চীনে ফেরত পাঠানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

 

বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের পুলিশ প্রধান নিশ্চিত করেন, ৪০ জন উইঘুরকে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি বিশেষ বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। উইঘুররা মূলত চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলের তুর্কিভাষী মুসলিম সংখ্যালঘু, যারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের এই আচরণকে “গণহত্যা” বলে আখ্যা দিয়েছে। ২০২২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারও জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের প্রতি চীনের আচরণকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

 

চীন থেকে পালিয়ে আসা উইঘুরদের বিষয়টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও থাইল্যান্ড বিতর্কিতভাবে উইঘুরদের চীনে ফেরত পাঠিয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে থাইল্যান্ড শতাধিক উইঘুর বন্দিকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চীনে ফেরত পাঠিয়েছিল, যা তখনও বিশ্বজুড়ে নিন্দার জন্ম দিয়েছিল।

 

থাইল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত আবারও প্রমাণ করলো যে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা জরুরি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও বিশ্বনেতাদের উচিত উইঘুরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তথ্যসূত্র : বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা

Source link

Exit mobile version