‘তবুও বাবরই পাকিস্তানের সেরা’

অনেক দিন ধরেই সুসময় খুঁজে ফিরছেন বাবর আজম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও পূরণ হয়নি সেই প্রত্যাশা। বরং পাকিস্তানের বিদায়ের পর তার দিকেই আঙুল উঠছে সবচেয়ে বেশি। সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে ¯্রফে তুলাধুনা করে চলেছেন তাকে। তবে তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন সালমান বাট। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের মতে, গত ২০ বছরে বাবরের চেয়ে ভালো কাউকে আর পায়নি পাকিস্তান।
এক সময় যিনি ছিলেন পাকিস্তানের নায়ক ও প্রবল জনপ্রিয়, বেশ কিছুদিন ধরেই সেই বাবরের দিন কাটছে নানা সমালোচনাকে সঙ্গী করে। যার ব্যাটে সেঞ্চুরি ছিল নিয়মিত দৃশ্য, তিনি গত ২৩ ওয়ানডে ইনিংসে শতরানের দেখা পাননি। সবশেষ তিন অঙ্কের স্বাদ পেয়েছেন ২০২৩ সালের অগাস্টে, সেটিও ছিল নেপালের বিপক্ষে। এই সময়ে অবশ্য সাতটি ফিফটি করেছেন তিনি। তবে তাকে নিয়ে মূল সমালোচনা রান করার ধরনের কারণে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই যেমন প্রথম ম্যাচে ফিফটি করেছেন তিনি। দলের হারের পর তবু তাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অনেক। ৬৪ রানের ইনিংসটির জন্য যে ৯০ বল লেগেছে তার! পরে ভারতের বিপক্ষে ভালো শুরু করেও আউট হয়েছে তিনি ২৩ রান করে।
তার কাছে প্রত্যাশা বেশি বলেই হয়তো তাকে নিয়ে সমালোচনাও চলছে বেশি। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা কাটাছেঁড়া করছেন পারফরম্যান্সের। সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজ যেমন বাবরের নাম ধরেই বলেছেন, ভারতের বিপক্ষে বড় মঞ্চে একবারও ম্যাচ-সেরা হতে পারেননি যিনি, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ-সেরা হতে পারেনি যে ব্যাটসম্যান, তার এত এত রানের মূল্য খুব একটা নেই। একইরকম অভিমত ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব মালিকসহ আরও অনেকের।
তবে সালমান বাট নেই সেই তালিকায়। সাবেক এই অধিনায়ক বরং তুলে ধরলেন বাবরের শ্রেষ্ঠত্ব, ‘৯ সেঞ্চুরি ও ২৬ ফিফটিতে বাবরের টেস্ট ব্যাটিং গড় ৪৪.৫ (আসলে ৯ সেঞ্চুরি ও ২৯ ফিফটি, গড় ৪২.৭৭)। ওয়ানডেতে তার গড় ৫৬.৭২ (আসলে ৫৫.৫০), সেঞ্চুরি ১৯টি, ফিফটি ৩৫টি। টি-টোয়েন্টিতে তার গড় ৪১ (আসলে ৩৯.৮৩), স্ট্রাইক রেট ১২৯। এই পরিসংখ্যান কি খারাপ? আমাকে একজন দেখান, গত ২০ বছরে যার পরিসংখ্যান বাবরের চেয়ে ভালো। একজনও কি আছে? ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার হিসেবে এখন যারা (সাবেক ক্রিকেটার) চেষ্টা করছে নিজেদের তুলে ধরার, তাদের সবার পুরো ক্যারিয়ার মিলিয়ে দেখুন, সবাই মিলে কয়টা ম্যাচ জেতাতে পেরেছে। আমার মনে হয়, এই তুলনাটা করা জরুরি।’
বাবরের সঙ্গে বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন ও জো রুটকে প্রজন্মের সেরা চার ব্যাটসম্যান ধরে একসময় বলা হতো ‘ফ্যাবুলাস ফোর।’ তবে বাবর এখন পেছনে পড়ে গেছেন অনেকটাই। অন্য তিন জনের কাতারে তাকে আপাতত রাখেন না অনেকেই, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। সালমান বাট যেমন বলেছেন, বাবরের পরিসংখ্যান এখনও যথেষ্টই উজ্জ্বল। তবে তার পড়তি ফর্মও ফুটে ওঠে পরিসংখ্যানেই। সবশেষ ২৬ টেস্ট ইনিংসে তার শতরান নেই। এই সময়ে ফিফটি করেছেন কেবল তিনটি। একসময় ব্যাটিং গড় ছিল ৫০ ছুঁইছুঁই। এখন তা নেমেছে ৪৩-এর নিচে। ২০১৯ সালের পর তার গড় এত নিচে নামেনি আগে।
যে সংস্করণ তার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা, সেই ওয়ানডেতে গড় ৬০ থেকে এখন নেমে গেছে ৫৬-এর নিচে। টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন ছিল আগে থেকেই। এখন রানও নিয়মিত করতে পারছেন না। এখানে ফিফটি নেই গত ১১ ইনিংসে। বাবর যে কোহলিদের কাতারে নন, এটা মানছেন সালমান বাটও। তবে সাবেক এই ওপেনারের মতে, বাবরের চেয়ে ভালো বিকল্প পাকিস্তানে নেই, ‘বোধসম্পন্ন কথা বলুন। আমাদের তো কোহলি বা উইলিয়ামসন নেই। বাবর অবশ্যই কোহলি নয়, তবে সে আমাদের সেরা। পাকিস্তানে তার চেয়ে ভালো কেউ নেই। সে রান করতে না পারলে তার পাশে থাকতে হবে। সে যখন রান করে, তখন তো তাকে পছন্দ না করলেও সারা দুনিয়ার সঙ্গে মিলে গুণগান করতেই থাকেন। ৮০-৯০ শতাংশ লোক এভাবেই চারপাশের ধারা অনুযায়ী কথা বলে।’
কোহলির সতীর্থদের সঙ্গে বাবরের সতীর্থদের তুলনা করে পাকিস্তান দলের অবস্থাও তুলে ধরলেন সালমান, ‘এখন তার ফর্ম যখন পড়তি… এরকম বাজে সময় তো কোহলিরও এসেছিল। কিন্তু কোহলি এতটাই উঁচু মানের ক্রিকেটার যে, ওই খারাপ সময়েই নিয়মিত ফিফটি করে গেছে। তাছাড়া, তার পাশেপাশে দলে কারা ছিল? রোহিত শার্মা, মাহেন্দ্র সিং ধোনি… তার সামনে-পেছনে এত এত ম্যাচ জেতানোর মতো ক্রিকেটার, বোলিংয়ে ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার…। বাবরের পাশে কারা আছে? কারও গড় ২৬, কারও গড় ২৯, কেউ ক্যাচই নিতে পারে না। গতিময় কোনো বোলার এলে সে বল লাইনে রাখতে পারে না।’