
পবিত্র রমজান মাস এলেই সমবেত কণ্ঠে বাহারি সুরে সেহরি খাওয়ার জন্য ডাকা হতো রোজাদারদের। এক সময় শেষ রাতে পুরান ঢাকায় গলির ধারে বয়স্করা অপেক্ষা করতেন। তাঁদের হাতে থাকত খুরমা কিংবা অন্য কোনো মিষ্টান্ন। জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেন নারীরা। দূর থেকে ভেসে আসত সমবেত কণ্ঠ, ‘বাহারে সাওম গুজরি যা রাহি হ্যায়, দিলে সায়েমপে বাদলি ছা রাহি হ্যায়’। এটাকে মূলত কাসিদা বলা হয়ে থাকে। কালের বিবর্তনে এখন যা হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে আবারও পুরান ঢাকার রাস্তায় দেখা মিলেছে হারাতে বসা এই বাঙ্গালী ঐতিহ্যের। যে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে এখন রীতিমতো ভাইরাল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কাসিদা গেয়ে একদল মুসল্লি রোজারদারদের সেহরি খাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। সুমধুর কণ্ঠে সুরে সুরে যা মন কেঁড়ে নেয় নেটিজেনদেরও। ভিডিওটি ছড়িয়ে পরতেই নেটিজেনরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রায় হারিয়ে যেতে বসা মোঘল আমলের এই ঐতিহ্যের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত অনেকেই। তারেক আব্দুল্লাহ নামের একজন সামাজিক মাধ্যমে কাসিদা গাওয়ার ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ঢাকায় “কাসিদা” গেয়ে সাহরির জন্য ডাকছেন একদল ভাই।”কাসিদা” একটা মৃতপ্রায় বাঙালি ঐতিহ্য। মোঘল আমলে ঢাকায় এই সংস্কৃতির প্রচলন ছিল। পুরাণ ঢাকার এই ঐতিহ্যকে আবার জাগিয়ে তোলার জন্য ভাইদের জন্য দোয়া রইল।
এক সময় হ্যাজাক বাতি মাথায় নিয়ে ২০-২৫ জনের একটি দল ঘুরত। হারমোনিয়াম নিয়ে কাসিদা গাইতো আপন সুরে। এভাবেই রোজাদারদের সেহরি খাওয়ার জন্য সময়মতো জাগিয়ে দিতো তারা। দলের লোকেরা মাসের শেষে বাড়ি বাড়ি যেত। ওদের বকশিশ দেওয়া হতো প্রতিটি বাড়ি থেকেই। তবে, এখন আর সেভাবে দেখা মেলে না কাসিদা গেয়ে রোজাদারদের জাগিয়ে দেওয়ার।
এবারের রমজান যেনো একটু ব্যতিক্রম এদিক থেকে, শুধু পুরান ঢাকায় নয় বেশ কিছু জায়গায়ই দেখা মিলেছে হারাতে বসা মোঘল আমলের বাঙালি এই ঐতিহ্যের। আবারও প্রাণ ফিরে পাওয়া কাসিদার ঐতিহ্য ধরে রাখবে পরবর্তী জেনারেশন এমনটিই চাওয়া নেটিজেনদের।