Status

ডিপিডিসিতে সোনা সিন্ডিকেটের দাপট

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি। সেখানে ফ্যাসিষ্ট দোসরা এখনো বহাল। ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমা এবং ডঃ শেখ মঈনুল হোসেন এখনো বলা রয়েছে। দুর্নীতি, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি, গ্রাহক হয়রানি, দালালদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরিতে সহায়তা, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন,রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানসহ অসংখ্য অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে বাড়ছে অসন্তোষ। বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সকালে বদলির আদেশ জারী করে বিকেলে আবার টাকা পেলে সেটা স্থগিত করে দেয় এই কর্মকর্তা। পিডিএসডি প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৯৪৭ কোটি টাকার মালামাল ক্রয় করা হলেও সে গুলো চারবছর ধরে পরিত্যাক্ত রয়েছে। এছাড়া ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ কিলোমিটার ক্যাবল নিতে সিএনপিসি’র মালিক পারভেজ চৌধরী ও সোনা মনির ভাই অপু চাকমা। এ সব অনিয়ম করেই সোনামনি চকমা এবং ডঃ শেখ মঈনুল হোসেন অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। এদিকে ডঃ শেখ মঈনুল হোসেন মেডিক্যাল অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করলেও বিদ্যুৎতের কর্মকর্তাদের উপর ছড়ি ঘুড়াচ্ছেন বলে মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগে চিঠি দিলেও তা ২ মাসে প্রতাহার করেনি মন্ত্রণালয়।
এবিষয়ে ডিপিডিসি’র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান ইনকিলাবকে বলেন,ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তার রিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সবরকম সুবিধা ভোগ করা ডিপিডিসির কর্মকর্তারা গত এক মাসে বোল পাল্টিয়ে নিজেকে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে দাবি করে আসছেন অনেক কর্মকর্তা। যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমা এবং ডঃ শেখ মঈনুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তরা নিজেদের দুনীতি ঢাকতে একটি বিভাগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সব ধরনে সুযোগ সুবিধা ভোগ এবং বড় বড় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) নিয়োগে-দুর্নীতি,অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এবার শীর্ষ কয়েকটি পদে কর্মকর্তা নিয়েগে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ বলা হয়,অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও দ্বৈত নাগরিকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিতে যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ করে মুখে ফেনা তুলে ফেলা একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা ডিপিডিসির কর্মকর্তারায় যেন ৫ ই আগস্ট এর পরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফন্ট লাইনার হয়ে গিয়েছে। তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় তারা যেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সর্বক্ষণ মাঠে আন্দোলনকারিদের সাথে জড়িত এবং তাদের সাথে সার্বক্ষণিক চট্টগ্রামের লোকজন কাজ করেছে। আদতে সেই সময় তারা আওয়ামীলীগের নেতাদের সবার সাথে বসে কেন এই আন্দোলন করা হচ্ছে, কেন ছাত্ররা রাস্তায়, কেন ছাত্ররা ঘরে ফিরে যাচ্ছে না এসব নিয়ে সর্বক্ষণ আলোচনা করেছে। কিন্তু এখন তাদের মুখের কথা শুনলে মনে হয় আওয়ামীলীগের নাম তারা শুনতেই পারে না। এ যেন চোখের নিমেষে মানুষ পাল্টে যাওয়ার অপরূপ রীতি। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (ডিপিডিসির) ঘাপটি মেরে থাকা দুষ্ট চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমার বিরুদ্ধে এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির লোক বলে পরিটিত। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিও ভুক্ত করণে সময় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এ নির্বাহী পরিচালকও গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট।এই সিন্ডিকেট ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশনে একটি চক্র গড়ে তুলেছে। নিয়ম ভঙ্গ করে গ্রাহক কে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, মিটার টেম্পারিং ও বাইপাস করে কোন গ্রাহককে চিহ্নিত হলে তাকে জরিমানার আওতায় না আনতে অধিনস্তদেরও মৌখিক নির্দেশনা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কাকরাইল ডিভিশনে এক বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় গ্রাহককে বাঁচাতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে বদলি বাণিজ্যের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দাপটে প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহক সেবা বিঘœত হচ্ছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কর্মকা- নিয়ে এমন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড থেকে নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমাকে প্রত্যহারকরাসহ দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় পাঠানো হলেও গত দুই মাসে ফ্যাসিষ্ট সরকারে আমলা মনি চাকমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার সিন্ডিকেটে জর্জরিত ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড। ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ডিপিডিসিতে সবকিছু চলছে আগের নিয়মে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার কারণেই পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগছে না ডিপিডিসিতে।

ডিপিডিসিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে বলা হয়,বিশেষ করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে নিচের দিকের পদে বদলির ক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। আগে ডিপিডিসিতে সব পদের বদলি অনুমোদন করতেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সোনা মনি চাকমা প্রেষণে ডিপিডিসিতে এসেই প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে নিচের দিকের সব কর্মচারীর বদলির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখছেন। অন্য বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানে (ডেসকো, ওজোপাডিকো) বদলি ও পদায়নের নীতিমালা থাকলেও ডিপিডিসিতে এমন কোনো নীতিমালা নেই। ডিপিডিসির বদলি ও পদায়ন হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। এ প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার কারণেই পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগছে না ডিপিডিসিতে। চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) ও ব্যবস্থাপক (অর্থ) পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়। এসবের হোতা হিসেবে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান,সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তফা ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোনা মনি চাকমার নাম শোনা যাচ্ছে। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এসব কর্মকর্তা ডিপিডিসিতে ব্যাপক অনিয়ম করছেন বলে অন্য কর্মকর্তাদের অভিযোগ। ডিপিডিসিতে সাধারণত ভাইভার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী একটি তালিকা তৈরি করে ভাইভা নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় সেই ধারা বজায় না রেখে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমার সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আসলে আমার বিরুদ্ধে একটি চক্রকাজ করছে।

Source link

Leave a Reply

Back to top button