
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার দ্বিতীয় মেয়াদে, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যদিও গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকার মধ্যে অবস্থিত, এটি ডেনমার্কের অধীনে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ। ট্রাম্পের মতে, এই দ্বীপের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত দেশের জাতীয় এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে।
মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ট্রাম্প তার গ্রিনল্যান্ডের ওপর দখলের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, “আমরা গ্রিনল্যান্ডের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকারকে সমর্থন করি, এবং যদি তারা চায়, আমরা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড আমেরিকার প্রয়োজন।” ট্রাম্প তার বক্তৃতায় বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটি পাব। যেকোনো উপায়ে আমরা এটি পাব।”
তবে কেন ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডে এত আগ্রহী? কূটনীতিকরা মনে করছেন, এই দ্বীপটির দখল পেলে আমেরিকার অর্থনৈতিক নিরাপত্তার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। বিশেষত, এখানে লুকিয়ে থাকা বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। গ্রিনল্যান্ডে স্বর্ণ, তামা, নিকেল এবং আরও অনেক মূল্যবান ধাতু রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়।
গ্রিনল্যান্ডের খনিজ সম্পদের বেশিরভাগই এখনও অব্যবহৃত রয়েছে, তবে এখানে বিরল খনিজের বিশাল সম্ভার রয়েছে। মাইনিং কোম্পানি আমারক মিনারেলস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলদুর ওলাফসন জানিয়েছেন, এই দ্বীপটি আগামী কয়েক দশকে উন্নত দেশগুলোর খনিজ সরবরাহের জন্য একাই যথেষ্ট হতে পারে। এখানে স্বর্ণ, তামা, নিকেল, লিথিয়াম এবং কোবাল্টের মতো মূল্যবান খনিজ রয়েছে, যা মোবাইল ফোন, ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক মোটর তৈরিতে ব্যবহার হয়।
এছাড়া গ্রিনল্যান্ডে তেলের খনিজ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসেরও সম্ভার রয়েছে। তবে, নতুন খনন বর্তমানে নিষিদ্ধ। গ্রিনল্যান্ডের বেশিরভাগ খনিজ সম্পদের খোঁজ এখনও শুরু হয়নি। মাত্র দু’টি সক্রিয় খনি রয়েছে বর্তমানে, এবং ১০০টি সংস্থাকে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই অনুমতি পাওয়া বিদেশি সংস্থাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ব্রিটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার, তবে আমেরিকার একটি মাত্র সংস্থা এতে জড়িত।
সবশেষে, ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের পরিকল্পনা শুধুমাত্র একটি ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, বরং একটি অর্থনৈতিক কৌশলও হতে পারে। গ্রিনল্যান্ডের খনিজ সম্পদ বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের জন্য অপরিহার্য, এবং এটি আমেরিকার অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি