ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণকারী বিশ^বিখ্যাত বিজ্ঞানী পাচ্ছেন মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার

বিশ^ বিখ্যাত পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহনকারী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম ২০২৫ সালে ঘোষিত স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ফলে ঝিনাইদহের গৌরব ও কীর্তিমান প্রয়াত এই গবেষককে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়ায় ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সুধীজনেরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার কর্মী প্রিন্সিপাল আমিনুর রহমান টুকু বলেন, অনেক আগেই এই পুরস্কার দেয়া উচিৎ ছিল। সাবেক প্রিন্সিপাল মহব্বত হোসেন টিপু বলেন, ড. জামাল নজরুল ইসলাম বিশে^র গর্ব ও গবেষকদের কাছে মডেল হিসেবে অগ্রগণ্য থাকবেন। মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরষ্কার পাওয়ায় ঝিনাইদহবাসি গর্বিত।
পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি মাসে তৎকালীন বৃটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের ঝিনাইদহ শহরে জন্মগহণ করেন। তার পিতা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ঝিনাইদহের তৎকালীন মুন্সেফ। ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া সড়কে অবস্থিত বিচারকদের জন্য নির্মিত বাসভবনটি এখনো চোখে পড়ে, যেখানে বিজ্ঞানী জমাল নজরুল ইসলাম জন্মেছিলেন। তার পিতা ছিলেন ঝিনাইদহের তৎকালীন মুন্সেফ।
জামাল নজরুল ইসলাম প্রায় এক বছর বয়স পর্যন্ত ঝিনাইদহের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠেন। পিতার চাকরির সুবাদে তিনি কলকাতায় চলে যান। শিশু, কিশোর ও যৌবন বয়সে কলকাতায় বেড়ে ওঠেন।
বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল ফেলো ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে গবেষণা করেন। ১৯৭১ থেকে ৭২ সাল এই দুই বছর ক্যালটেক বা ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন।
জামাল নজরুল ইসলামের অনেক গবেষণা নিবন্ধ বিখ্যাত সব বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে তার গবেষণাগ্রন্থ ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বের কসমোলজিস্টদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। পরের বছর কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ নামক আরেকটি বই।
আইনস্টাইন পরবর্তীকালে মহাবিশ্ব গবেষণায় তার জার্নাল বিরাট অবদান রেখে চলেছে। বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসসলাম পরবর্তীকালে লেখেন ‘ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স’ বা ‘মহাবিশ্বের দূরবর্তী ভবিষ্যৎ’। ১৯৮৪ সালে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম প্রবাসের উন্নত জীবন, সম্মানজনক পদ, গবেষণার অনুকূল পরিবেশ, বিশ্বমানের গুণীজন সাহচর্য এবং লাখ লাখ টাকার লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। স্থায়ী হন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে যোগ দেন মাসিক মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে। ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ ৭৪ বছর বয়সে চট্টগ্রামে তিনি ইন্তেকাল করেন। চট্টগ্রামে হযরত গরীবুল্লাহ শাহ (রহ.) এর মাজার এলাকায় তাঁকে দাফন করা হয়।