
জুলাই আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ গুলির আঘাতে মারা গিয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) নামের এক সংস্থার জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জুলাই আন্দোলনে মোট ১২ হাজার ৪৩৫ জন আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্য ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে ৮৮১ জন নিহতের তথ্য উঠে আসে। তাদের মধ্যে ৭৬৫ জন (৮৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ) গুলির আঘাতে ও ৬৯ জন (৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ) পুড়ে মারা যান। এছাড়া ৪৫ জনকে (৫ দশমিক ১১ শতাংশ) পিটিয়ে মারা হয়। অন্যদিকে, ১ জন ( দশমিক ১১ শতাংশ) ছুরিকাঘাত এবং ১ জন ( দশমিক ১১) ইটের আঘাতে মারা গেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনায় ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস স্টাডি রিপোর্ট’ শীর্ষক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন এই জরিপের প্রকল্প সমন্বয়ক নূরুননবী শান্ত। তিনি জানান, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সারাদেশে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া শ্রমিক ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২ দশমিক ৬১ শতাংশ, কৃষক ১ দশমিক শুন্য ২ শতাংশ, শিক্ষক দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ডাক্তার দশমিক ৫৭ শতাংশ মারা গেছেন। বাকিরা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ছিলেন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিহত, আহত, নির্যাতন, হুমকি, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট, সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, নিখোঁজ, মন্দির ও মাজারে আক্রমণের শিকার হয় ১১ হাজার ৩৪৮ জন। সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৭৩, হুমকির শিকার ৯৩৩ জন, নির্যাতনের শিকার ৭৩১ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৫৪ জন।
৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৮৭৬টি, যার মধ্যে অগ্নিসংযোগ ৩৩৩, ভাঙচুর ও লুটপাট ৩০০, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি আক্রমণ ২২৩, মন্দির ও মাজারে আক্রমণের ঘটনা ২০টি।
এমএসএফের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী, জুলাই আন্দোলনে নিহত নাজমুলের মা নাজমা আক্তার, খালিদ হাসান সাইফুল্লার বাবা খাইরুল হাসান এবং চাঁনখারপুলে আহত রকিবুল হাসান।
অনুষ্ঠানের সালমা আলী বলেন, জুলাই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। যথাযথভাবে ভূক্তভোগীদের জন্য সাপোর্ট সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের পুনর্বিন্যাস করে পুলিশকে নারীবান্ধব করতে হবে। প্রচার ও প্রসারে সাংবাদিকদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সাইদুর রহমান বলেন, আগের যে কোনো গণঅভ্যুথান থেকে এবারের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। নিহত ৮৮১ নিহতের মধ্যে মাত্র ৩০০ জনের স্বজনেরা মামলা করেছেন। মামলা না করার কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, অজানা ভয় ও হুমকির কারণে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পূর্বের অসংঙ্গতি সমস্যগুলো এখনও বিরজমান রয়েছে।