
জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর মানহাইমে এক ভয়াবহ গাড়ি হামলায় দুইজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (৪ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। জার্মান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা, তবে এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য জড়িত নেই। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ছিল এটি একটি সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনা, তবে পরে নিশ্চিত হয় যে হামলাটি পরিকল্পিত ছিল।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে মানহাইম শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি কালো গাড়ি দ্রুতগতিতে পথচারীদের ওপর উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৮৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা নারী ও ৫৪ বছর বয়সী এক পুরুষ নিহত হন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। হামলাকারী ৪০ বছর বয়সী একজন জার্মান নাগরিক, যিনি রাইনল্যান্ড-পালাটিনেট প্রদেশের বাসিন্দা। তিনি একজন ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনার হিসেবে কাজ করতেন। তার মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর রোমিও শ্লুসলার।
ঘটনার পরপরই পুলিশ বিশাল অভিযানের মাধ্যমে হামলাকারীকে আটক করে। তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মানহাইমের মেয়র ক্রিশ্চিয়ান স্পেখট এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “আমরা নিরীহ মানুষের ওপর এই বর্বরোচিত ও অমানবিক হামলায় গভীরভাবে মর্মাহত। আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা নিহত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে রয়েছে।”
ঘটনার সময় মানহাইম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করা এক রেস্টুরেন্ট কর্মী মিকলা সেলা বলেন, “আমি হঠাৎ দেখি একটি কালো গাড়ি দ্রুতগতিতে ছুটে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই মানুষের চিৎকার শুনি এবং দেখি একজন সাদা জ্যাকেট পরা ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে আছেন।” এদিকে, মানহাইম ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা আহতদের মধ্যে তিনজনকে বিশেষ যত্নে রেখেছে, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে।
এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ঘটনাটি নিয়ে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে শোক প্রকাশ করছি এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।” জার্মানির সম্ভাব্য পরবর্তী চ্যান্সেলর এবং ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (CDU) নেতা ফ্রিডরিশ মের্জ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “জার্মানিকে আবার নিরাপদ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, এবং আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।”
সম্প্রতি জার্মানিতে একের পর এক গাড়ি হামলার ঘটনা ঘটছে। গত ডিসেম্বর মাসে মাগডেবুর্গ শহরে একটি গাড়ি ক্রিসমাস মার্কেটে উঠে গেলে ছয়জন নিহত হয়। ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখে এক ব্যক্তি বিক্ষোভকারীদের ওপর গাড়ি তুলে দিলে এক মা ও তার সন্তান মারা যায় এবং ৩০ জন আহত হয়।
মানহাইম হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। শহরজুড়ে কার্নিভাল চলছিল, যার মধ্যে “রোজ মানডে” নামে বিশেষ উৎসবও ছিল। পুলিশ ইতোমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করেছে এবং কাছের শহর উলমে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিএনএন