
>> কারাবাসের আগেই মুক্তি মিললো অর্ণবের
>> মামলার পর প্রত্যাহারের আবেদন বাদীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাকে এক ছাত্রীকে পোশাক নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণবের (২৫) বিরুদ্ধে। ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ঘটনার পর তিনি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ ও পরে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধনী ২০২০) ১০ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বুধবার (৫ মার্চ) দুপুর আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটের দিকে শাহবাগ থানাধীন জাতীয় যাদুঘরের সামনে থেকে বাদী ও বাদীর বন্ধু পায়ে হেঁটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে রাজু ভাস্কর্যের সামনে পৌঁছালে আসামি অর্ণব বাদীর সামনে গিয়ে বাদী ‘পর্দা করেননি কেন’, এ প্রশ্ন করেন। বাদীর ‘ওড়না ঠিক নেই কেন’ বলাসহ আরও কুরুচিপূর্ণ কথা বলে বাদীকে যৌনপীড়ন করেন। বাদী তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে মোবাইল ফোনে কল দিতে চাইলে আসামি দৌড়ে পালিয়ে যান।
মামলা দায়েরের পরই সন্ধ্যায় অভিযুক্ত অর্ণবকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে তাকে ছাড়াতে শাহবাগ থানায় যান একদল তৌহিদি জনতা। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিলেও কোনো উগ্র আচরণ করেননি বলে জানায় শাহবাগ থানা পুলিশ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অর্ণবকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে বাদী (ভুক্তভোগী ছাত্রী) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরাবর মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এ আবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব শুনানি শেষে এক হাজার টাকা মুচলেকায় আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়ার পর আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্তি পান মোস্তফা আসিফ অর্ণব। ফলে কোনোরূপ কারাবাসের আগেই মুক্তি মিলে তার।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আজমত হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, মামলায় অর্ণবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বাদীকে হয়রানি করেননি। আর বাদীও মামলা দায়েরের পর তা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
এদিন গ্রেফতার অর্ণবকে আদালতে তোলার সময় সেখানে উপস্থিত হন ২০-৩০ জন তৌহিদি জনতা। জামিন মঞ্জুরের পর ‘নারায়ে তাকবির- আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে অর্ণবের মাথায় পাগড়ি, গলায় একাধিক ফুলের মালা ও হাতে কোরআন দিয়ে বরণ করে নেন উপস্থিত তৌহিদি জনতা।
এসময় জামিনপ্রাপ্ত অর্ণব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি নির্দোষ। আমি কোনো ছাত্রীকে হয়রানি করিনি। বরং ওই ছাত্রী আমাকে হুমকি দেয়।’
জানা যায়, অর্ণব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার জমদুয়ারা গ্রামের মাহবুবুর রহমানের ছেলে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তা করেছেন মোস্তফা আসিফ অর্ণব– এমন অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ছাত্রী ঘটনার বিবরণ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। সেখানে অভিযুক্ত মোস্তফার ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘এই লোকটা আজ আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বলে- আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোন হলে থাকেন, কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। সে বলে সে এই ক্যাম্পাসের কেউ না।’
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর স্বেচ্ছায় মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন ভুক্তভোগী সেই ছাত্রী। প্রত্যাহারের আবেদন বলা হয়, আসামি মোস্তফা আসিফ অর্ণব তার নিজের ভুল বুঝতে পারায় ও তার বাবা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় দেশের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় আমার মামলা প্রত্যাহার করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আমার সার্বিক নিরাপত্তা কামনা করছি।
এমআইএন/এমকেআর/জেআইএম