জরুরিভিত্তিতে মেরামত হবে ২২১৫ কিমি বেহাল গ্রাম সড়ক

গ্রামের অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী করতে প্রত্যন্ত গ্রামের সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয় বিগত সরকার। জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৬৭১ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হয় প্রকল্পের আওতায়। বাকি দুই হাজার ২১৫ কিলোমিটার সড়কও দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অধিক ভাঙা রাস্তা জরুরিভিত্তিতে মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সিলেট, নোয়াখালী, ফেনী অঞ্চলে সংস্কার করা সড়কগুলোও বন্যায় অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসহ বাকি বেহাল সড়ক মেরামত করা হবে।
এজন্য ‘গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এর আগে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল তিন হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদকালে এটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। পরে জুন ২০২৪ ও সবশেষ জুন ২০২৬ নাগাদ মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু আরও সড়কের অবস্থা বেহাল হওয়ার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে জুন ২০২৭ পর্যন্ত।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। প্রকল্পটি নিয়ে এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
আরও পড়ুন
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলমান প্রকল্পটি নানা কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়েছে। গ্রামে টার্গেট কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সেজন্য বাড়ানো হবে প্রকল্পের সময়-ব্যয়। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কগুলো তাদের নিজস্ব অর্থায়নে হয়। এ প্রকল্পে শুধু গ্রাম সড়কের কাজ করা হবে। আমাদের গ্রামই কিন্তু প্রধান। গ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো যত উন্নত হবে দেশও তত এগিয়ে যাবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে সড়ক পুনর্বাসনের জন্য মোট সাত হাজার ৮৮৬ কিমি লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর মধ্যে জুন ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৬৭১ কিমি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ৮৫৯ কিমি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে, যা শেষ করার জন্য সময় বাড়ানো প্রয়োজন। প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত কিছু সড়কের পরিবর্তে সাম্প্রতিক বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক পুনর্বাসনের জন্য ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকল্পের সংশোধন প্রয়োজন।
উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কগুলো তাদের নিজস্ব অর্থায়নে হয়। এ প্রকল্পে শুধু গ্রাম সড়কের কাজ করা হবে। আমাদের গ্রামই কিন্তু প্রধান। গ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো যত উন্নত হবে দেশও তত এগিয়ে যাবে।- পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত, বিটুমিনাস কার্পেটিং দিয়ে ওভারলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম সড়কের পুনর্বাসন খাতে একক ব্যয় প্রথম সংশোধনের তুলনায় দ্বিতীয় সংশোধনে বেড়েছে। এছাড়া কাজের পরিমাণ কমেছে ৬৬৪ কিমি। একক ব্যয় বাড়ায় কাজের পরিমাণ কমেছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৭৬টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৪২৫ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব রাস্তা মেরামত ও সংস্কার না করার ফলে কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধা পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষক। একই সঙ্গে গ্রামীণ জনগণের বাণিজ্যিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে দারিদ্র্য বিমোচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব কারণেই দেশের ৬৪ জেলার অধিক ভাঙা রাস্তা মেরামত ও সংস্কারের জন্য প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছিল।
দেশের গ্রামাঞ্চলের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ কারণে বিদ্যমান সড়কের একটি বড় অংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগ করা সরকারি সম্পদের অপচয় ও পল্লি জীবনের কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের জনগণ। এ কারণে গ্রাম সড়কের পুঞ্জীভূত রক্ষণাবেক্ষণের পরিমাণ কমিয়ে বিশেষ করে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে পুরো দেশের গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের কাজ এতদিন চলমান ছিল। কিন্তু জনপ্রতিনিধি না থাকায় গ্রাম সড়কের অবস্থা বর্তমানে আরও বেহাল।
এমওএস/এএসএ/এমএস