চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে যা পেল বাংলাদেশ

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরে অংশ নিতে যাওয়ার সময় বেশ জোর গলায় নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হতেই যাচ্ছে তার দল। তবে ক্রিকেটের ‘অ আ ক খ’ও যারা জানেন তাদের পক্ষেও বাস্তবতা মেনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের এই আশার বাণীর প্রতি আস্থা রেখেছিলেন বলে মনে হয় না। বাস্তবে হয়েছেও সেটা। জয়হীন এক হতাশার টুর্নামেন্ট শেষ করল বাংলাদেশ।

তবে পাকিস্তান থেকে যে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা একেবারে খালি হাতে ফিরছেন তা নয়। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পনের পর বাংলাদেশের দিকে হয়ত করুণ দৃষ্টি দিয়েছিলে রসিক বৃষ্টি। যার বদৌলতে একেবারে খালি ঝুলিতে নয়, এক পয়েন্ট নিয়েই দেশে ফিরতে পারছে ‘টাইগার’ খ্যাত দলটি। সঙ্গে কমপক্ষে ২ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। এটাই বা কম কিসে!

আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, টুর্নামেন্টের সপ্তম ও অষ্টম স্থানে থাকা দলের জন্য পুরস্কার ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। পাশাপাশি, প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দল পাবে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার।

‘এ’ গ্রুপে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের নেট রান রেট অবশ্য ভালো। তাই এই গ্রুপের তিন নম্বর দল তারা। ওদিকে ‘বি’ গ্রুপে আগের দুই ম্যাচেই জয়হীন ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেও হেরে গেলে টুর্নমেন্টের ষষ্ঠ সেরা দল হওয়ার সুযোগও আছে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে এক লাফে ৮৫ হাজার ডলার বেশি বাগিয়ে নিতে পারবেন শান্ত-মিরাজরা।

তবে এই অর্থপ্রাপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা ঢাকা যাবে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে পছন্দের সংস্করণে টানা দুই আইসিসি টুর্নামেন্টে এমন ভরাডুবি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে কদিন আগে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে স্বয়ং নির্বাচক কমিটিতে থাকা সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠেও।

বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্স অবশ্য টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়ার আগে শঙ্কার কথাটি জানিয়েছিলেন। মূলত ওয়ানডে ফরম্যাটের এই আসরে খেলতে যাওয়ার কোনো প্রস্তুতিই ছিল না বাংলাদেশের। যে সময়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা তখন সবাই ব্যস্ত সময় কাচিয়েছেন বিপিএল নিয়ে। টি-টোয়েন্টি দিয়ে কিভাবে ওয়ানডের প্রস্তুতি নেওয়া যায় সেই প্রশ্নও রেখেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অভিজ্ঞ কোচ। তবে তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে চ্যাম্পিয়ন হতে চাওয়ার কথা শুনিয়েছিলেন শান্ত।

তার সেই আশার বাণী শুনে কেউ হেসেছিলেন কিনা জানা নেই। হয়ত নিজের বিশ্বাসের জায়গা থেকেই কথাটা বলেছিলেন শান্ত। তবে বাস্তবতা থেকে তার সেই কথার দূরত্ব এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এই ব্যাটার।

ব্যাট হাতে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতাই মূলত সামনে আসছে বার বার। বাজে শট খেলে উইকেট বিলানোর পুরোনো রোগ এখনও সারেনি। প্রান্ত বদল করে খেলতে না পারার ব্যর্থতা থেকেও বের হওয়া যায়নি। এবার তো দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল মোট ৩৪০ ডট বল (১৫৯ ও ১৮১)। দেশে ফিরে ডট বল নিয়ে কাজ করবেন বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন দলপতি শান্ত।

রাওয়ালপিন্ডিতে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর টিভি সাক্ষাৎকারে সঞ্চালক রামিজ রাজা প্রশ্ন তোলেন এই ঘাটতির জায়গা নিয়ে। এসময় শান্ত দেশে ফিরে এটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

“অবশ্যই (স্ট্রাইক রোটেশন চিন্তার কারণ)… নেটে আমাদের ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। কীভাবে প্রান্ত বদলাতে পারি, ম্যাচে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, সেসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমরা কীভাবে অনুশীলন করছি এবং ম্যাচে সেটা কতটা কাজে লাগাচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, ছেলেরা বুঝতে পারবে, কী করা উচিত।”

বরাবরের তোই বোলিং বিভাগের পারফরম্যান্স ছিল তুলনামূলক ভালো। প্রথম ম্যাচে ২২৮ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ৪৭ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে ভারতকে। পরেরটিতে ২৩৬ রানের পুঁজি নিয়ে নিউজিল্যান্ডকেও ৪৭ ওভার পর্যন্ত আটকে রাখে বাংলাদেশ।

দুই ম্যাচ হারলেও লম্বা সময় লড়াই করা থেকে ইতিবাচকতা খুঁজে নিতে চান শান্ত। সাথে ভুলগুলো থেকে নিত চান শিক্ষা।

“আগের দুই ম্যাচ যদি দেখেন, আমরা হয়তো হেরে গেছি… তবে যেভাবে লম্বা সময় খেলা ধরে রেখেছিলাম, খুব প্রেরণাদায়ী আমাদের জন্য। যেসব ছোট ছোট ভুল করেছি, সামনের দিনে সেসব নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করব এবং ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করব। ভালো বিষয় হলো, দুই ম্যাচেই আমরা ভালো ঘুরে দাঁড়িয়েছি এবং লম্বা সময় খেলায় ছিলাম।”

দুই ম্যাচের একটিতেও ২৪০ ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে তাওহীদ হৃদয়ের সেঞ্চুরি ও জাকের আলির সঙ্গে তার রেকর্ড জুটিতে কিছুটা মান বাঁচে। পরের ম্যাচে শান্তর ব্যাটে দুইশ পার করে দল।

ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় যে আস্থার জায়গা সেই মুশফিকুর রহিম দুই ম্যাচেই ছিলেন ব্যর্থ। তার আউটের ধরনও বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। ৩৭ বছর বয়সী মুশফিকের তাই অনেকে শেষও দেখে ফেলতে শুরু করেছেন। সঙ্গে জোর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৩৯ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহকে নিয়েও।

গণমাধ্যমের খবর, দল দেশে ফিরলে এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটোরের কাছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইবে বিসিবি। কারণ, পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৭ সালে। সেই পরিকল্পনায় এই দুজন আছেন কিনা সেটা জানতে তাই কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

আপাতত বাংলাদেশ দলের কোনো খেলা নেই। এপ্রিলের মাঝামাঝি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুয়ে। এর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে নিজেদের শানিত করার সুযোগ মুশফিক-মিরাজদের সামনে। যা শুরু মার্চের প্রথম সপ্তাহে।

Source link

Exit mobile version