
গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গন থেকে আইনজীবীর মুহুরি ও অফিস স্টাফকে মারধর করে জামিন প্রাপ্ত দুই আসামি সহদরকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বাদী পক্ষের সন্ত্রাসীরা। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আদালত প্রাঙ্গনে ঘটনাটি ঘটে। এসময় অন্তত ১৩ জন আহত হয়। অপহৃত জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, শ্রীপুরের তেলিহাটি এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে বাবুল ও তার ছোট ভাই মিলন।
গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম জানান, শ্রীপুর থানার মারামারির একটি মামলায় ১৩ আসামি অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। গত বুধবার গাজীপুর সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তারা স্থায়ী জামিন লাভ করেন। জামিন প্রাপ্ত ১৩ জনকে নিয়ে মুহুরি মতিউর রহমান আদালত প্রাঙ্গনে আসলে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এসময় আসামিরা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারির রুমের সামনে আসলে মামলার বাদী শ্রীপুর তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে এস এম নাজমুলসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক নিয়ে বিবাদীপক্ষের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলাকারীরা মুহুরি মতিউর রহমানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আইনজীবীর সহকারিসহ আসামিদের মারধোর করতে থাকে। এসময় ছুরির আঘাতে আইনজীবীর অফিস সহকারি আইয়ুব আলী গুরুতর আহত হয়। এছাড়া জামিনপ্রাপ্ত আসামি আলমগীর মৃধা, দুলেনা, মমতা, জয়নাল আবেদীন রানাসহ ১৩ জন আহত হয়। পরে হামলাকারিরা জামিনপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে আদালতের ভিতর থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় আদালত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
এবিষয়ে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিনা আক্তার জাহান বীথি ও সেক্রেটারির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার পর আদালত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা আদালত এলাকায় সশস্ত্র অবস্থান করছে। তারা আইনজীবীদের মারধরের হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তারা আরো জানান, আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির পূর্বনির্ধারিত সভায় আলোচনা করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, আদালত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা একটি সন্ত্রাসী কর্মকা-। সন্ত্রাসীরা কেউ পার পাবে না। অপহৃতদের উদ্ধার করতে পুলিশী অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে শ্রীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।
মেজাজ হারালেন হাজী সেলিম, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পড়লেন দুই পৃষ্ঠার কাগজ, আনিসুল-মামুন রিমান্ডে, নতুন করে গ্রেফতার দীপু মনিসহ ৯ জন
কোর্ট রিপোর্টার : যাত্রাবাড়ি থানার হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত তাকে গ্রেফতার দেখান। তবে এ মামলায় আদালতে হাজিরার পর আইনজীবীর ওপর বিরক্ত হয়ে মেজাজ হারান তিনি। তবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি দুই পৃষ্ঠার কাগজ পড়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণের তথ্য জানতে পেরেছেন।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার জিহাদ হোসেন ও ওয়াসিম শেখ হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ৩ দিন করে ৬ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। বুধবার সকালে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ’র আদালত এই অনুমতি দেন। একই আদালত জিহাদ হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনেরও ৩ দিন নিজ হেফাজতে নিয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেসাবাদ করার অনুমতি দেন।
এছাড়াও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ ৯ জনকে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদনও মঞ্জুর করেন। আনিসুল হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের জিহাদ হোসেন হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। একই থানায় ওয়াসিম শেখ হত্যা মামলায় আনিসুল হকের আরো ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এসব রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিন হাজী সেলিমসহ অন্য আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে ১০টা ৬ মিনিটে পুলিশ প্রহরায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে হাজতখানা থেকে বের হয়। আদালতে তোলার পর হাজী সেলিমের হেলমেট খুলে দেয় পুলিশ। তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি নিজের আইনজীবীর প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করেন। তিনি মেজাজ হারিয়ে তিনি নানা ধরনের অঙ্গভঙ্গি করতে পারেন। মাঝে মধ্যে নিজের হাতের আঙুল দিয়ে বিভিন্ন কিছু বুঝানোর চেষ্টা করেন। পরে তাকে যাত্রাবাড়ি থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তখন তার আইনজীবী প্রাণ নাথ কথা বলার জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেন। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে কাঠগড়ায় তার আইনজীবী দুই পৃষ্ঠার প্রিন্ট করা কাগজ তাকে পড়তে দেন। এ সময় আইনজীবীরা তাকে বুঝিয়ে দেন। পরে ১০টা ৩৮ মিনিটে ফের পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেয়া হয়।
এ বিষয়ে তার আইনজীবী প্রাণ নাথ বলেন, পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় তার মালিকানাধীন মদিনা মেরিটাইমের নামে সাড়ে ১০ একর জমি রয়েছে। এই জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়ার খবরটি তাকে জানানো হয়েছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো সাড়ে ১০ একর জমি ক্রয়ের রেজিস্ট্রেশন করা হবে, এই তথ্যও তাকে কাগজে লিখে জানানো হয়েছে।
হাজী সেলিম কেন বিরক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি কারাগারে তেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি কথা বলতে পারেন না। এমনকি তার কথাও কেউ বুঝতে পারে না। এসব কারণে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমাদের তো এখন কিছু করার নেই। যতটুকু পারছি আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তার সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখছি।
যাত্রাবাড়ি থানার পৃথক মামলায় সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহম্মেদ, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল ও ভোলা ৪ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঢাকা ৭ আসনের সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ।
জিহাদ হোসেন হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার শনিরআখড়া এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন জিহাদ হোসেন। এ সময় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত অবস্থা হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতে বাবা নুরুল আমিন মোল্লা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে যাত্রাবাড়ি থানায় একটা হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওয়াসিম শেখ হত্যার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী মো. ওয়াসিম শেখ। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা করেন।