
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। মহাসড়কে ৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও গাড়িতে দূরপাল্লার যাত্রী সাধারণ রোজা রেখে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।
এ সময় কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও কারখানায় রক্ষিত গাড়ি বাহিরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলা শুরু হয়। অপরদিকে ওই নারী শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
শ্রমিকরা জানিয়েছে, রোববার একজন নারী শ্রমিক কারখানায় কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে, তিনি ছুটি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রথমে ছুটি না দিলে তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই নারী শ্রমিক কারখানা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের কাছে এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। মারা যাওয়া শ্রমিকের নাম আফছানা আক্তার লাবনী (৩০)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার পাররুখী এলাকার মো. আফসার আলীর মেয়ে। তিনি তার স্বামী হৃদয়ের সঙ্গে মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
এদিকে পুলিশ জানায়, প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানায় রোববার একজন নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। সেটি জানাজানি হলে সোমবার সকাল ৮টার পরে ওই কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা মহাসড়কে টায়ার ও কারখানার সামনে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেন ও কারখানায় ভাঙচুর চালান।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, রোববার কারখানার এক নারী শ্রমিক ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনার পর্যাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে এবং কারখানা কর্তৃপক্ষ সে ঘটনার বিষয় ও প্রমাণ আমাদেরকেও দিয়েছে। ওই নারী শ্রমিক ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। কিন্তু ওই ঘটনায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। কারখানার সামনে থাকা কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেয়। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ একত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কারখানার গেটে গিয়ে শ্রমিকরা ধাক্কাধাক্কি করেন, শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান। পরে ১২টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে মহানগরীর বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কায়সার আহমেদ জানান, ‘একজন নারী পোশাক শ্রমিকের আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই নারী শ্রমিকের স্বামী হৃদয়কে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।