গাজায় ভয়াবহ খাদ্য সংকট, দাম দ্বিগুণেরও বেশি

ইসরায়েল খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে বেড়েছে, বিশেষ করে সবজি ও ময়দার দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। গাজায় অন্তত ৮০টি কমিউনিটি কিচেন খাদ্য সরবরাহ করে থাকে, তবে চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এসব রান্নাঘরে থাকা খাদ্য দ্রুতই ফুরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সপ্তাহান্তে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজামুখী ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেন। তিনি দাবি করেন, হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তি নবায়নে অস্বীকৃতি জানানোয় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হামাসের এক মুখপাত্র এই নিষেধাজ্ঞাকে “সস্তা হুমকি” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
১৯ জানুয়ারি থেকে চলমান যুদ্ধবিরতির সময় প্রতি সপ্তাহে গাজায় হাজার হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করত। কিন্তু শনিবার (১ মার্চ) চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, তারা ত্রাণ সামগ্রী চুরি করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আবু কায়েস আরিয়ান জানান, রোববার রাত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সবকিছুর দাম দুই-তিন গুণ বেড়েছে।”
অন্য বাসিন্দারা জানান, এক কেজি টমেটোর দাম রাতারাতি বেড়ে ১০ শেকেলে, আর শসার দাম ১৭ শেকেলে পৌঁছেছে।
একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক, হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এক কেজি টমেটো কেনার সামর্থ্যও নেই আমাদের। মানুষের হাতে নগদ অর্থ নেই, ফলে তারা খাবার কিনতে পারছে না।”
গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে খাবার বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দা ইসা মেইত বলেন, “আমরা আগেই জানতাম, দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে, সেটাই হলো। ত্রাণ আটকে দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সন্তানদের কিভাবে লালন-পালন করব?”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কেউ কেউ ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সংকটের সুযোগ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়াচ্ছেন।
তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী দাবি করেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই তারা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আগে আমি ৩-৫ শেকেলে চিনি কিনতাম, এখন আমাকে ৬ শেকেলে কিনতে হচ্ছে। এতে আমার লাভ খুব সামান্যই হয়।”
গাজার এই মানবিক সংকট কতদিন চলবে, তা অনিশ্চিত। তবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সূত্র : বিবিসির