গাজায় নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু, ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি: জাতিসংঘ

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পর ১০০,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এটি গাজার শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় ঘটনা, কারণ এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন এবং দীর্ঘসময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ায়, গাজার অনেক শিশু দীর্ঘদিন পর স্কুলে ফিরেছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত গাজার ১০০,০০০ শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এ পর্যন্ত গাজার ১৬৫টি পাবলিক স্কুল পুনরায় চালু হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য এটি ১৬ মাস পর প্রথমবার শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসা।”
গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ফিলিস্তিনের প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় ৮৫% স্কুল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে কমপক্ষে ১২,৮০০ শিক্ষার্থী, ৮০০ শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১,১৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে এবং শিক্ষা খাতে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
দুজারিক আরও জানিয়েছেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানগুলি উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেছেন, “জেনিন, তুলকারাম ও তুবাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান চলছে, যার ফলে আরও নিহত, বাস্তুচ্যুতি, এবং স্বাস্থ্য সেবা, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জরুরি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।” তিনি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
গাজার যুদ্ধবিরতি ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছিল, যার ফলে ইসরায়েলের আক্রমণ থামানো হয়। এই আক্রমণে ৪৮,৩০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন, এবং গাজা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়া, ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে। গাজার শিক্ষাব্যবস্থায় এই সংকটের মধ্যেও ১০০,০০০ শিক্ষার্থীর স্কুলে ভর্তি হওয়া এক বড় পদক্ষেপ এবং এটি এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি