
জেলেদের খাদ্য সহায়তা না দিয়েই শুরু হয়েছে দেশের ছয় অভায়শ্রমে মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা। আয় রোজগার বন্ধ থাকায় রমজানের বাজার করতে পারেনি অনেক জেলে পরিবার। এমন অবস্থায় চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটছে পটুয়াখালীর তেতুলীয়া নদীতে মাছ শিকারী হাজার হাজার জেলের।
নদীতে মাছ শিকার বন্ধ। তাই বেকার সময়ে কেউ নতুন জাল বুনছেন, আবার কেউ ছেড়া জাল জোড়া লাগাচ্ছেন। কেউ কেউ আবর ট্রলার মেরামত করছেন। মাছ ধরায় নিশেধাজ্ঞা থাকায় এভাবেই বেকার সময় পার করছেন পটুয়াখালীর তেতুলিয়া পাড়ের জেলেরা।
নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে নিবন্ধিত প্রতি জেলেকে দুই মাসের জন্য ৪০ কেজি করে ৮০ কেজি চাল দেয়ার কথা। কিন্তু খাদ্য সহায়তার চাল না দিয়েই পহেলা মার্চ থেকে শুরু হলো নিষেধাজ্ঞা। তাই রমজানের শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কার কবলে পরতে হলো বেকার জেলে পরিবারগুলো। অনেকেই রমজানের বাজার করতে শিমশিম খাচ্ছেন। চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
ইনকিলাবের সংবাদাতার সাথে কথা হয় চরমোন্তাজের জেলে স্বপন মাঝিসহ ওখান কার জেলেদের সাথে। তারা জানান, নদীতে বেশ কিছু দিন জালে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। আশায় ছিলাম নদীতে মাছ ধরা পড়বে এবং সরকারি খাদ্য সহায়তা শুরুতেই পাব তাদিয়ে আমগো পরিবার গুলো রমজান মাসটা ভালো ভাবে কাটিয়ে দিতে পারব। কিন্তু কোন আশাই আমগো পূরণ হল নাহ। না পেলাম মাছ না পেলাম এখন পর্যন্ত সরকারি সহয়তা কি ভাবে এখন বাজার সদায় করব। আশা ছিল রোজার মাসটা কোন রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই ইবাদাতে কাটিয়ে দিব। যে অবস্থা দেখি তাতে আমগো না খেয়ে রোজার মাস কাটাতে হবে।
জেলে শাহআলম জানান, আমারা অনেক জেলে এখানে আছি নিবন্ধনের বাহিরে। আমাদের জেলে কার্ড হবে বলে নাম দিয়েছি প্রায় দু’বছরের কাছাকাছি সময় হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাইনি। মৎস্য বিভাগের কাছে আমারা জোর দাবি করছি আমাদের ব্যবস্থা আপনারা দ্রুত করুন।
জেলেরা আরও জানান, বছরের তিন-চার বার নিষেধাজ্ঞা থাকে মাছ শিকারের ওপর। এসময় সরকারের পক্ষথেকে বেকার জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা বরাদ্ধ থাকলেও প্রতি বছরই তা বিতরণ করা হয় শেষ দিকে। নিষেধাজ্ঞা শেষে চাল পেলে তা দিয়ে কষ্ট লাগব হয়না জেলেদের। তাই এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল বিতরণের জন্য নতুন সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের ৬টি অভায়াশ্রমে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের জন্য সবধরণের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সরকার। যারা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে তাদেরকে দু’বারে ৮০ কজি চাল দেওয়া হবে। আর যেসব জেলেদের নিবন্ধন এখনও হয়নি তাদেকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর রুস্তুম থেকে ভোলার ভেদুরীয়া পর্যন্ত, তেতুলীয়া নদীর একশো কিলোমিটার এলাকাকে অভায়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পটুয়াখালীতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৫ হাজার। এর বাইরেও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার অর্ধলাখ জেলে। বছরের পর বছর এই পেশায় কাজ করেও এখনো নিবন্ধনের আওতায় আসেননি অনেকে। তাই তাদের ভাগ্যে জুটেনা সরকারি কোন সহায়তাও।