
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদলের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ আর যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। হাসিনার পক্ষ নিয়ে সরাসরি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়তো ওরা। অথচ আজ ক্ষমতার পালাবদলে হারিকেন জ্বালিয়ে ও যেনো খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার ওপর পুলিশের নির্বিচারে গুলি চালানোর অন্যতম আদেশদাতাও এ দুজন। হাসিনা পালানোর পর থেকেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে তারা। বর্তমানে কোথায় লুকিয়ে আছেন হারুন-বিপ্লব এ নিয়ে জনসাধারণের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
আন্দোলনের সময় বিপ্লব কুমার তো সরাসরি মন্তব্য করেছিলেন, যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বিপ্লব সবসময়ই এমনভাবে কথা বলতেন মনে হতো তিনি সরকারের কোন চাকরিজীবী নন বরং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যতম দালাল। তা হবেই বা না কেন সে তো উঠেই এসেছিলো ছাত্রলীগ থেকে। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল শাখার সেক্রেটারি ছিলো বিপ্লব। সম্প্রতি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে দিনের পর দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম এই দোসর বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে একাধিক সূত্রে। তবে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তার অবস্থান সম্পর্কে। অপরদিকে ভাতের হোটেলের মালিক সাবেক ডিবি প্রধান হারুন এক সময় বাঘের মত গর্জে উঠলেও বর্তমানে বিড়ালে পরিণত হয়েছে। হাসিনা পালানোর পর দেয়াল টপকে পালিয়েছে হারুন এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে।
পুলিশের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালনের চেয়েও বেশি পরিচিত ছিলো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীসহ তারকাদের ডিবি অফিসে ভাত খাইয়ে। যদিও এখন আর তার নিজের গদিও নেই আবার ভাতের হোটেলও নেই। সকলের অপ্রিয় হাউন আঙ্কেল হাসিনার পতনের পর টকশোতে দেখা দিলেও বাস্তবে আর কখনো দেখা দেননি। পুলিশের নির্লজ্জ বেহায়া এই কর্মকর্তা কখনো তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্তও হয়নি। হবেই বা কি করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার হাতে গড়া ছাত্রলীগের অংশ ছিলো হারুনও। ২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেওয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অন্যতম ৬ জন সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন হারুন। তাদের অ্যাপায়ন করার একটি ছবি সেসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ উষ্মা প্রকাশ করে বলে, “ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।” এরপরই গত বছরের ৩১ জুলাই তাকে ডিবি থেকে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্সে বদল করা হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে অবস্থান করছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম এই দোসর। হারুন-বিপ্লব যেখানেই থাকুক তাদেরকে দ্রুত দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি এদেশের প্রতিটি আম পাবলিকের।