কৃষকের ১০ একর জমি দখল করে যুবদল নেতার মাছের ঘের


শরীয়তপুরের পাটনীগাঁও এলাকায় কৃষকের জমি দখলে নিয়ে মাছের ঘের তৈরির অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে জমি দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি বিষ দিয়ে ফসল নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

অভিযুক্ত যুবদল নেতা রোকন সরদার জেলার সদর উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি জমি দখলে নেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ নিয়ে মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার পাটনীগাঁও এলাকায় কৃষকরা ধানসহ নানা রবি ফসল উৎপাদন করেন। সম্প্রতি যুবদল নেতা রোকন সরদার ও তার লোকজন মাছের ঘের তৈরি করতে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সেই এলাকার ১০ একর ফসলি জমি দখলে নেন। তারা জমির চারপাশ এক্সাভেটরের সাহায্যে খনন করা শুরু হলে কৃষকরা তাদের জমিতে ঘের করায় বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের বেলায় অন্তত ১০ জন কৃষকের তিন একর জমির ফসলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

এ নিয়ে বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। পরে তারা জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ফসলি জমি রক্ষার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির চারপাশ খনন করে ঘের তৈরির প্রস্তুতি চলছে। ঘেরের মাঝখানে থাকা জমির ধানগাছ কিটনাশকের প্রভাবে মরে গিয়ে বাদামী রঙ ধারণ করেছে। এছাড়াও মাটি কেটে কিছু জমির ধানগাছ অপসারণ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষক শফিক শেখ বলেন, ‘ঘের প্রকল্পের মাঝখানে আমার এক কানি জমি পড়েছে। অনেক কষ্ট করে জমিতে ধান রোপণ করেছি। মাছের ঘেরে জমি দেইনি বলে রোকন সরদার ও তার লোকজন জোর করে মাটি কেটে আমাদের জমিতে বিষ দিয়ে ধানগাছ মেরে ফেলেছে। আমরা ফসল করে খেতে চাই, মাছের ঘের করতে চাই না। যারা এই কাজ করেছে তাদের বিচার চাই।’

কৃষক ফজল খাঁ বলেন, ‘কিস্তি উঠাইয়া ধান লাগাইছি। এই জমির ধান দিয়াই আমরা সারা বছর চলি। সেই জমিতে জোর করে ঘের বানাচ্ছে। আমরা জমি দেই নাই বলে জমির ফসল সব নষ্ট করে ফেলছে। আমরা আমাদের জমিতে ঘের করতে দিব না।’

ইয়ারুন বেগম নামে এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমাগো জমির ধান সব ওষুধ দিয়া মাইরা ফেলছে। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, ওসি, ডিসির কাছে গেছি কিন্তু কোনো জায়গায় বিচাই পাইনাই। প্রশাসনকে হাত কইরা তারা জোর কইরা ঘের করতাছে। আমরা আমাদের কৃষি জমি ফেরত চাই।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত যুবদল নেতা রোকন সরদারের মুঠোফোনে ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। রোকনের বোন শামসুন্নাহার বলেন, ‘যারা পুকুর লিজে নিছে তারা বিষ দিছে। আমার ভাই রোকন শুধু ভেকু দিয়ে প্রজেক্টের মাটি কাটার কাজ করে, সে বিষ দেয়নি। এই অভিযোগ মিথ্যা।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘যে অভিযোগটি পেয়েছি সেটি অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিকভাবে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবো। এখানে দুষ্কৃতকারী যারা রয়েছে, যারা এর জন্য দায়ী তাদের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’

বিধান মজুমদার অনি/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Exit mobile version