
রমজানের শুরুতে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের নলতা শরীফে প্রতিবছরের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম ইফতার মাহফিল। নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই মাহফিলটি প্রতিবছরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
বৃহস্পতিবার পঞ্চম রোজায় সরজমিন দেখা যায়, ইফতার প্রস্তুতির বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ফজরের নামাজের পর থেকেই প্রায় ৩০ জন কর্মী সিংগাড়া, ছোলা, ডিম সিদ্ধ, ফিরনি ও অন্যান্য পদ তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। বিকাল গড়িয়ে মাগরিবের সময় ঘনিয়ে আসলে, ইফতার মাহফিল এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
নলতা রওজা শরীফে ইফতার প্রস্তুতিতে দেওয়া হয় ভুনা ছোলা, সিংগাড়া, ফিরনি, সিদ্ধ ডিম, চিড়া, কলা ও খেজুর। প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক ইফতার বণ্টনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রথমে পানির পট ও গ্লাস দেওয়া হয়, এরপর সারিবদ্ধভাবে প্লেট সাজানো হয়।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহ.) ১৯৩৫ সালে মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর রমজান মাসে এই ইফতার মাহফিল আয়োজন করতেন। ১৯৫০ সাল থেকে শুরু হয়ে আজও এই আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। মিশনের উদ্যোগে এবারও রমজান মাসব্যাপী এই ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করে থাকেন।
বাবুর্চি মোঃ মুক্তার হোসেন বলেন, “আমি এখানে সিংগাড়া তৈরির কাজে প্রায় ৪৫ বছর ধরে আছি। প্রতিদিন এখানে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার সিংগাড়া তৈরি করা হয়।” আরেক বাবুর্চি আসাদুর রহমান জানান, “আমরা ২৬-২৭ জন লোক ইফতার প্রস্তুত করি এবং প্রতিদিন সকাল ৫ টা ১৫ মিনিটে কাজ শুরু করি, বিকাল ৫ টার মধ্যে কাজ শেষ হয়।”
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার এসএম বিপ্লব হোসেন বলেন, “এখানে ৬ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করবে, এই বড় আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। পাশাপাশি, আমার ইফতারও মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কবুল হবে, এজন্য আমি বিশেষ প্রার্থনা করি।”
মিশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছর প্রথম রমজান থেকে ৩০ রমজান পর্যন্ত এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মানুষ একত্রে ইফতার করেন।” তিনি আরও জানান, “দেশ-বিদেশের ভক্তগণ যৌথভাবে এই ইফতারের অর্থ জোগান দেন এবং প্রতিদিন বিশেষ মোনাজাত করা হয় দেশের কল্যাণে।”
এভাবে, প্রতি বছর এই বিশাল ইফতার মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে নলতা শরীফ এক ধর্মীয় ও সামাজিক মিলনস্থলে পরিণত হয়, যা সাতক্ষীরা জেলার পাশাপাশি অন্যান্য জেলা থেকেও মানুষকে আকর্ষণ করে।