কলাবাগানে কনস্ট্রাকশন অফিসে যা ঘটেছিল

রাজধানীর কলাবাগানে কাবিকো কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়কসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে এমন হামলা ও লুটপাটের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা। মূলত ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে কেউ-ই কিছু বলতে পারছেন না। তবে হামলাকারীরা ঘটনার সময় আওয়ামী লীগের অফিস বলে দাবি করেছেন ভাষ্য ভুক্তভোগীদের।
প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের ভাষ্য, হামলাকারীরা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশ করেই আজ থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম চলবে বলে দাবি করেন। ইফতার আয়োজন নিয়েই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশ করেছিলেন তারা। গত ১৫ আগস্ট একইভাবে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের স্বীকার হয় এ প্রতিষ্ঠানটি। মারধর করা হয় কর্মীদের।
শনিবার (৮ মার্চ) সরেজমিনে কলাবাগান কাবিকো লিমিটেড ঘুরে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ও আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির প্রবেশমুখেই তালাবদ্ধভাবে পরে আছে দুটি ভ্যানগাড়ি। একটি ভ্যানগাড়ির ওপর বেশকিছু আনারস রাখা, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান শাখার একটি ব্যানারে ঢাকা আছে। এরপর ভবনটির তিন তলায় অবস্থিত শেখ কবির কাবিকো কনস্ট্রাকশনে প্রবেশ করতেই ভেতরে ছড়ানো ছিটানো। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শেখ কবির হোসেনের রুমে প্রবেশ করতেই ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু যন্ত্রাংশ দেখা গেছে। এছাড়া রুমের ভেতরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন ছবি টাঙানো অবস্থায় দেখা গেছে।
এছাড়া পাশে অবস্থিত ম্যানেজারের রুমেও ভাঙচুরের চিত্র দেখা গেছে। রুমটির মধ্যে একটি আলমারি, আলমারির দুটি ড্রয়ার এবং একটি ডেস্কের ড্রয়ার ভাঙা পরে থাকতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে অফিসটি সিসি ক্যামেরা ভাঙা অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।
কাবিকো লিমিটেডের পিওন ইয়াসিন মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, আমি মেইন গেটে ছিলাম। কিছু ছেলে ঢুকতে দেখে আমি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তখন তারা আমাকে বলেন এটা কীসের অফিস? আমি বলি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অফিস। তখন তারা বলে এটা আওয়ামী লীগের অফিস ছিল না? আমি বলি না। কিন্তু তারা ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের ছবি পেয়ে ভাঙচুর শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার জহির উদ্দিন বলেন, কাল ছুটির দিন হওয়ায় আমরা অফিসে ছিলাম না। আমি যা শুনলাম সেটা হচ্ছে,কিছু লোক এসেছিল এসে ভাঙচুর লুটপাট করেছে। তাদের মধ্যে থেকে দু-একজন ভাঙচুর করতে নিষেধ করেছিল। আবার দু-এক জন ভাঙচুর করেছে। ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। অফিসের ৪টা পিসি-ডেস্কটপ, একটি ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। আলমারি থেকে ৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ও ড্রয়ার থেকে লাখের কিছু কম টাকা নিয়ে গেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে তাদের নিয়ে গেছে।
মালিক কোথায় আছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে অসুস্থ থাকায় অনেকদিন অফিসে আসেন না। মালিকের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে। এ গোপালগঞ্জের কারণেই তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে টার্গেট করা হতে পারে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কলাবাগান থানার সাব ইনস্পেক্টর সোলাইমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত চলছে। আপনারা যে নিউজ পেয়েছেন ঘটনা তেমনই। এখন আইও আছে কোর্টে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি আমরা।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শনিবার (৮ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, অভিযানের নামে বাসা বা অফিস তছনছ করার অধিকার কারো নেই। কোনো খবর থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান, অভিযান আমরা পরিচালনা করবো। আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না।
মবের বিষয়ে করা এক প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মব জাস্টিসের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকালও বলেছেন। ২-৩ চারটি ঘটনা হয়ে গেছে। রিকোয়েস্ট করবো, যেকোনো জায়গায় অভিযান পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছেন ল’ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি।
তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে মামলা নিয়েছি। আইনের সর্বোচ্চ ধারা প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছি। কোনো খবর থাকলে আমাদের খবর দেন, অভিযান আমরা পরিচালনা করবো। আইন হাতে তুলে নেবেন না।
কি ঘটেছিল কলাবাগানের কাবিকো লিমিটেডে?
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা নাগাদ রাজধানীর কলাবাগানে কাবিকো লিমিটেড নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়কসহ ১৪ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। পরে কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জানান।
তিনি জানান, শুক্রবার কলাবাগান এলাকা থেকে যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়কসহ ১৪ জনকে আটক করে। পর তাদের থানায় হস্তান্তর করেছে। বর্তমানে ১৪ জন থানা হেফাজতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে শেখ কবির নামে এক ব্যক্তির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আটকদের নাম জানাতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর আগের জায়গায় নেই। সেখান থেকে একটি ছাত্র সংগঠন তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী বা সমন্বয়ক পরিচয়টা এখন আর এক্সিস্ট (অস্তিত্ব) করে না।
নাহিদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, এ পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যদি অপকর্ম করে তাহলে তারা যেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন।
কেআর/এমএএইচ/