কর দিয়েও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত গাউসিয়া আবাসিকের বাসিন্দারা

চট্টগ্রামের হামজারবাগ এলাকার গাউসিয়া আবাসিকে বসবাসকারী প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। সিটি করপোরেশনের অধীনে হলেও নেই সড়কবাতি। রাস্তায় নেই ইটের চিহ্ন। অথচ নিয়মিত পৌরকরসহ নানান সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করেন আবাসিকের বাসিন্দারা। বহুতল ভবন নির্মাণেও মানা হয়েছে সিটি করপোরেশনের সব নিয়ম।
সবশেষ গত বছর সড়ক ও ড্রেন উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া হলেও ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে ঠিকাদার কিছু নালা নির্মাণ করে কাজ বন্ধ রেখে পালিয়ে যান। যেখানে নালা হয়েছে সেখানে রাস্তা প্রায় এক থেকে দেড় ফুট নিচে পড়ে যাওয়ায় সামনের বর্ষায় সড়কটি নালায় পরিণত হবে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের।
গাউসিয়া আবাসিকের বাসিন্দারা জানান, একসময়ে ওই আবাসিকে নিজের জায়গা ছিল বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতেরও। ডা. শাহাদাত মেয়র হওয়ায় আবাসিক এলাকাটি নাগরিক সেবায় যুক্ত হওয়ার আশা বাসিন্দাদের।
গাউসিয়া আবাসিক মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাউসিয়া আবাসিকটি হয়েছে ২০ বছর আগে। শুরু থেকেই এলাকাটি অবহেলিত। গত কয়েক মাস আগে আমরা সিটি করপোরেশনে সড়ক নির্মাণের জন্য একটি আবেদন করেছিলাম। সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প দেয়। ঠিকাদার নালা নির্মাণ করে। এর মধ্যে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনে ঠিকাদারও কাজ বন্ধ রেখে চলে গেছেন। যে কারণে রাস্তা নিচু হয়ে গেছে। এখন সামনে বৃষ্টি শুরু হলে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।’
গাউসিয়া আবাসিকটি হয়েছে ২০ বছর আগে। শুরু থেকেই এলাকাটি অবহেলিত। গত কয়েক মাস আগে আমরা সিটি করপোরেশনে সড়ক নির্মাণের জন্য একটি আবেদন করেছিলাম। সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প দেয়। ঠিকাদার নালা নির্মাণ করে। এর মধ্যে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনে ঠিকাদারও কাজ বন্ধ রেখে চলে গেছেন।- গাউসিয়া আবাসিক মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান
তিনি বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জায়গা কিনে সিটি করপোরেশনের যাবতীয় ফি-রাজস্ব দিয়ে সিডিএ থেকে প্ল্যান অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন। অনেকে ১০ তলা ভবনও করেছেন। আমাদের পাশেই ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা। এখানে রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত থাকার কারণে ভাড়াটিয়ারাও থাকতে চান না।’
আরও পড়ুন
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি ২০০৫ সাল থেকে গাউসিয়া আবাসিকের বাসিন্দা। এই আবাসিকের প্রথম ঘর আমি নির্মাণ করেছি। ওই সময় থেকেই এ আবাসিকে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মানে ২০ বছর ধরে গাউসিয়া আবাসিকের বাসিন্দারা চরম বৈষম্যের শিকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগে এলাকার মানুষের চাপে সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প দেয়। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ হওয়ার পর আমাদের কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে।’
নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে সরকারি পর্যায়ে কখনো কোনো উন্নয়ন হয়নি। অনেক সময় বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো লাইটগুলোও বন্ধ থাকে। রাত হলে এখানকার সড়কে অমাবস্যার রাতের চেয়েও বেশি অন্ধকার হয়ে যায়। অথচ সিটি করপোরেশন আমাদের কাছ থেকে সব ধরনের কর আদায় করছে।’
গাউসিয়া আবাসিকে আমরা অনেক আগেই উন্নয়নকাজ করছিলাম। কিন্তু সেখানে কাজ করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জটিলতাও ছিল। প্রকল্পটি সংশোধন করে সড়কের কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ শুরু হবে।-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর গাউসিয়া আবাসিকের ড্রেন ও সড়ক উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প ছিল। সে প্রকল্পে ড্রেনের কাজ শেষ হলেও সড়কের কাজ শেষ হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘গাউসিয়া আবাসিকে আমরা অনেক আগেই উন্নয়নকাজ করছিলাম। কিন্তু সেখানে কাজ করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জটিলতাও ছিল। সব জটিলতা ডিঙিয়ে আমরা কাজ করতে গিয়েছিলাম। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে ফান্ডের সংকট ছিল। যে কারণে কাজটি শেষ করা যায়নি। এখন প্রকল্পটি সংশোধন করে সড়কের কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ শুরু হবে।’
এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএস