
কক্সবাজার পৌরসভার বিমানবন্দরের পশ্চিমে সংঘর্ষে শিহাব কবির নাহিদ নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে সোমবার (৩ মার্চ) রাতে নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও শিহাব কবির নিহতের ঘটনায় বিমানবাহিনীর সদস্যদের দায়ী করা হয়েছে।
এজাহারের একাংশে বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় মহিউদ্দিন নামের এক যুবক বাদীকে অবহিত করেন, বিমানবাহিনীর এক সদস্যের গুলিতে তাদের একমাত্র সন্তান শিহাব কবির নাহিদ মারা গেছেন। মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে মরদেহটি দেখেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে ধর্মীয় প্রক্রিয়ায় দাফন সম্পন্ন করেছেন।
বিমানবাহিনীর সদস্য বা অন্য কারও সঙ্গে শিহাব কবিরের কোনো বিরোধ নেই উল্লেখ করে এজাহারের অপর অংশে বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় স্থানীয় জাহেদুল ইসলাম নামের এক যুবককে বিমানবাহিনীর সদস্যরা ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের খবরে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে জাহেদকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ হয়। একপর্যায়ে বিমানবাহিনীর সদস্য এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন।
‘ওইসময় উৎসুক জনতার সঙ্গে রাস্তায় কী হচ্ছে দেখতে বের হন শিহাব কবির। সমিতি পাড়ার নাঈমের বাসার সামনে এলে তার মাথায় গুলি লাগে। আহত নাহিদকে বিমানবাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে ঘাঁটিতে নিয়ে যান। সেখানে দীর্ঘক্ষণ রক্তরক্ষণে মারা যান নাহিদ।’
আরও পড়ুন:
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। এর আগে ১ মার্চ বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার ঘটনায় একটি মামলা করে বিমানবাহিনী। যেখানে দুজনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। তবে নাম উল্লেখ দুজনের নাম-পরিচয় জানাননি ওসি।
নিহত শিহাব কবির (৩০) কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ার বাসিন্দা ও প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের সাবেক সুপার নাসির উদ্দিনের ছেলে।
২৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনার বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট থেকে স্থানীয় একজনের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সমিতিপাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাঁধা দেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য ও সমিতিপাড়ার দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
‘ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমানবাহিনীর চারজন সদস্য (একজন অফিসার ও তিনজন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন। শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমানবাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।’
আইএসপিআর আরও জানায়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমানবাহিনীর সদস্যরা বিমানবাহিনীর রুলস অব এনগেজমেন্ট অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো তাজা গুলি ছোড়া হয়নি।
সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এমএস