এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মোশারফের ক্ষমতার উৎস কী?

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ময়মনসিংহ এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের যান্ত্রিক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন দীর্ঘ ১০ বছর একই কর্মস্থলে থেকেছেন। এ সুবাধে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সংবাদটি স্থানীয় বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের মাঝে ব্যাপক আলোচনার স্থান পায়। তবে সংবাদ প্রকাশে ক্ষোভ জানিয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে মামলার ভয় দেখিয়ে সাংবাদিকতার কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছে প্রভাবশালী অভিযুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী। বর্তমানে তার ক্ষমতার উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সমালোচনা চলছে উপসহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন যদি ময়মনসিংহে দুর্নীতি আর অনিয়ম করে না থাকেন তাহলে একই কর্মস্থলে কিভাবে কি উদ্দেশ্যে আর কোন আইনে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর কাটালেন। তাকে বদলী করা হলেও কোন ক্ষমতায় ময়মনসিংহে অবস্থান করেছেন। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনা। অনেকেই তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছেন। যোগদানের তারিখ গত ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হলেও তিনি অদৃশ্য ক্ষমতায় বিগত প্রায় ৩০ বছর একই কর্মস্থলে আছেন এনিয়েও চলছে সমালোচনা। শুধু ইনকিলাব নয় তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ হলেও কেন তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা চলছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় থাকার বিধান না থাকলেও তিনি দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে রয়েছেন। ফলে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এই সুবাধে তিনি আধিপত্যে বিস্তার করেছেন। তার অধিনস্থ কিংবা সেবা গ্রহীতারা মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। নিজের ইচ্ছামাফিক চালাচ্ছেন দাফতরিক কার্যক্রম। বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের লক্ষ্যমাত্রা। আর এই সুযোগে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে বনেছেন তিনি। গাড়ি-বাড়ি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র জানিয়েছে, মোশাররফ হোসেন এলজিইডির বিভিন্ন গাড়ি নষ্ট না হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া বিল ও ভাউচার তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজ নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। যার মধ্যে ব্যাংক ব্যালান্সের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই অফিসে দীর্ঘ বছর বহাল তবিয়তে থাকায় নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। বছরের পর বছর এলজিইডির বিভিন্ন যন্ত্রের মেরামতের নামে ভুয়া ভাউচার বিল ও তেল চুরি করে অবৈধ উপায়ে অর্থ আত্মসাত ও এলজিইডির নানান যন্ত্রাংশ স্ক্যাপ হিসেবে বাইরে পাচার করে সরকারি অর্থ লোপাট করে আসছেন। সূত্র জানিয়েছে এসব কাজ ময়মনসিংহে করতে সুবিধা বিধায় বদলী হলেও রহস্যজনক ভাবে ময়মনসিংহেই খুটি গেড়ে বসেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির এক কর্মচারী জানান, মোশারফ হোসেন প্রায় ৩০ বছর ধরে ময়মনসিংহে কর্মরত রয়েছেন। যদিও তার প্রকৃত কাজের সময়কাল মাত্র এক যুগ। একাধিকবার বদলি হলেও, অল্প সময়ের মধ্যে তিনি আবার ময়মনসিংহে ফিরে আসেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সহায়তায় নানা কৌশল অবলম্বন করে টিকে থাকেন। একবার সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে, তিনি বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা এবং বড় সাংবাদিকদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তাদের ভয় দেখান এবং আইসিটি মামলার ভয় দেখিয়ে সাংবাদিকদের নীরব রাখার চেষ্টা করেন।
দুর্নীতিতে বেপরোয়া এই কর্মকর্তা ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহবাসী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে তিনি এভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাত করতে সক্ষম হয়েছেন। ময়মনসিংহবাসী বলছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা কঠোর আন্দোলন করবেন। এ বিষয়ে ময়মনসিংহবাসী তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছেন এবং তার অপকর্মের বিচার চাচ্ছেন। অন্যথায় ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রজনতা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন সব বৃথা যাবে বলেও মন্তব্য করছেন বিভিন্ন মহল।