এবার বরিশালের বাজার শীতকালীন সবজিতে সয়লাব

লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে সবজীর আবাদে বরিশালের বাজার এবার শীতকালীন সবজিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় সাধারন মানুষ সাম্প্রতিক বছরগুলোর সর্বনিম্ন দরে এসব কৃষিপণ্য কিনতে পারছেন। গত মাসখানেক ধরেই বরিশালে পাইকারী থেকে খুচরা বাজারেও ফুলকপি, বেগুন, বাঁধাকপি, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, সিম, শসা, শালগম, গাজর, বারোমাসি লাউ থেকে শুরু করে লালশাক, পালংশাক ও লাউশাক সহ সব শীতকালীন সবজিই অনেকটা পানি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এবারো পাইকারী ও খুচরা বাজারের ব্যবধান ব্যাপক।

 

 

 

বরিশালের সিটি মার্কেটের পাইকারী আড়তে ৫ টাকা কেজি দরের ফুলকপি ও বাঁধাকপি খুচরা বাজার সহ ফেরিওয়ালাদের ভ্যানে উঠলেই ২০ টাকা কেজি। এমনকি এবার বরিশালে আশাতীত টমেটোর উৎপাদনের ফলে তার কেজি পাইকারি বাজারে ৭-৮টাকায় নেমে এসেছে। অথচ মৌসুমের শুরুতে এসব সবজি ১শ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। এখন তা খুচরা পর্যায়েই ২০ টাকা কেজি। ফলে ভোক্তাগনও মহাখুশি।

 

 

 

প্রায় ১৪ লাখটন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার প্রায় ৮০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদের ফলে মৌসুমের শেষে উৎপাদন এযাবতকালের সর্বোচ্চ ১৭ লাখটন অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৬ লাখ ৩১ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে শীতকালীন সবজির উৎপাদন দেড় কোটি টন অতিক্রম করবে। যারমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই আবাদ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টরে। আর উৎপাদনও ১৭ লাখটন ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।

 

 

 

বিগত খরিপ-২ মৌসুমে বিগত মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ২৪ লাখ টন আমন উৎপাদনের সাথেই কৃষিযোদ্ধাগন সবজি আবাদে মাঠে নেমে পরেছিলেন। তবে গত অক্টোবরের ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এ ভর করে বিলম্বিত অতিবর্ষণ সবজীর আবাদকে কিছুটা বিলম্বিত করলেও উন্নত প্রযুক্তি ও যথাযথ সার ব্যবস্থাপনার কারণে এ অঞ্চলের মাঠে শীতকালীন সবজি সঠিক সময়েই হাসি ছড়িয়েছে।

 

 

 

ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ সহ কৃষকদের কারিগরি সহায়তা প্রদানও অব্যাহত রেখেছি। আবাদ-প্রযুক্তি হস্তান্তর সহ সার্বিক সহযোগীতা সম্প্রসারণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এবার বরিশালে সবজি আবাদ ও উৎপাদনে এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনও বিগত বছরগুলোতে ২০ টন থেকে এবার ২২ থেকে ২৩ টন অতিক্রম করেছে। বরিশাল অঞ্চলের প্রধান এ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার মতে, এবার মূল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাবের পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের অতি বর্ষণে আমন আবাদ বিলম্বিত হওয়া সহ কর্তনও কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন নিয়ে প্রথমে শঙ্কা থাকলেও তা অতিক্রম করা গেছে। তবে বরিশাল অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি বাজারে উত্তরাঞ্চলের চেয়ে কিছুটা দেরিতে আসায় খুবভাল দাম না পেলেও উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অতিক্রম করায় কৃষকরা লোকসানে পরেনি।

 

 

 

গত বছর রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের ৭৮ হাজার হেক্টরে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হলেও এবার মৌসুমের শুরুতে প্রকৃতির বৈরী আচরণে পরিস্থিতি কিছুটা অনিশ্চিত ছিল। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসায় কৃষিযোদ্ধাগন সময়ের সঠিক ব্যবহারে আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে পেরেছেন। উৎপাদন ১৭ লাখটন অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।

 

 

তবে গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ‘বারী’ শীতকালীন বিভিন্ন সবজীর উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করলেও বরিশাল অঞ্চলে এখনো তার কাঙ্ক্ষিত আবাদ সম্প্রসারণ ঘটছেনা । ফলে এ অঞ্চলে কম জমিতে অধিক সবজী উৎপাদন এখনো কিছুটা পিছিয়ে। কৃষকগন কম লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি রপ্তানি বাজারেও এ অঞ্চলের অবদান থাকলেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না।

 

 

তবে গত কয়েক দশক ধরে বরিশালের বানরীপাড়া, উজিরপুর ও নেসারাবাদ সহ কয়েকটি এলাকার বিল অঞ্চলে ‘ভাসমান ধাপ পদ্ধতি’তে সবজী সহ নানা ধরনের সবজীর বীজ থেকে চারা উৎপাদন হচ্ছে। ফলে এসব বীজতলা থেকে বর্ষা বিদায়ের সাথেই দ্রুত শীতকালীন সবজীর চারা উত্তোলন করে রোপণ সম্ভব হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কিছুটা কম সময়ে সবজীর আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। ফলে জমিতে আদ্রতা বিরাজ করার সাথে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ সহজতর হচ্ছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে বর্তমানে ‘বিশ্বের শতাধিক দেশে বাংলাদেশের যে কৃষি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, সেখানে বরিশাল অঞ্চলের অবদান ক্রমে বাড়ছে। যারমধ্যে শীতকালীন সবজীই অন্যতম প্রাধান্য কৃষিপণ্য। ‘আগামীতে রপ্তানি বাজার আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার দেশে সবজীর আবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে’ বলেও জানিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।

 

Source link

Exit mobile version