উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ছে

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ছে। আরো অন্তত চারজন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ পাচ্ছেন প্রফেসর সি আর আবরার। আজ বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে নতুন এই উপদেষ্টাদের শপথ হবে বলে জানা গেছে। তবে নতুন কতজন উপদেষ্টা শপথ নেবেন সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। প্রেস সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন প্রফেসর সি আর আবরার। নতুন একজন উপদেষ্টা যুক্ত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট উপদেষ্টার সংখ্যা হবে ২৩ জন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময় নিয়োগ পান ১৬ জন উপদেষ্টা। ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকায় তিনজন উপদেষ্টা ওইদিন শপথ নিতে পারেননি। তারা পরে শপথ নেন। পরে আরও চারজন উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হন। সর্বশেষ ১০ নভেম্বর তিনজন উপদেষ্টা যুক্ত হন। অন্যদিকে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মারা যান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেন। এরপর সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট উপদেষ্টা হন ২২ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর সি আর আবরার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পাচ্ছেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার (সমন্বয় এবং সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নামও শোনা যাচ্ছে নতুন উপদেষ্টা পদে। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদ থেকে নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেন। পরে শূন্য হওয়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পান দপ্তর ছাড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসা মাহফুজ আলম। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার অধীনে রয়েছে। এছাড়া বর্তমান শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একসঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারছেন না বলে জানিয়ে আসছিলেন।

প্রফেসর সিআর আবরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নামকরা শিক্ষক উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন,বুধবার উনি শপথ নেবেন। প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অনেক দিন ধরেই বলছিলেন, উনি একসঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারছেন না। যেহেতু উনি অ্যাডভান্সড স্টেজে, প্ল্যানিং মিনিস্ট্রিতে অনেক বড় দায়িত্ব ওনার। এ জন্য অধ্যাপক সি আর আবরার যুক্ত হচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদে। শরণার্থী ও শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সি আর আবরারের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ আগস্ট ফরিদপুরে। তার পিতা আবদুস সাত্তার চৌধুরী ও মা সোফিয়া সুলতানা। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৭৯ সাল থেকে টানা চার দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খ্যাতিমান এই অধ্যাপক শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তার গবেষণার বিষয় রোহিঙ্গা শরণার্থী, স্বল্পমেয়াদি শ্রম অভিবাসী এবং বাংলাদেশে ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষী সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে। তিনি শ্রম নিয়োগ শিল্প, সামাজিক সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। সি আর আবরার উর্দু ভাষাভাষী তরুণদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাম্প সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রসঙ্গত, বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এই মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করে আসছেন।

 

Source link

Exit mobile version