Status

উপজেলা চত্বরে সূর্যমুখীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য , সিলেটে নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের

দূর থেকে দেখলে মনে হবে মাটির বুকে বিশাল আকৃতির হলদে চাদর বিছানো। তবে কাছে গেলেই সেই ভুল ভাঙবে। আর চোখে পড়বে উঁচু করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দুলতে থাকা ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার।
চোখ জুড়ানো এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিনভর এই সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন অজস্র মানুষ। সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ চত্বরের পতিত জমিতে প্রথম বারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ গোটা এলাকাজুড়ে নতুন আবহের সৃষ্টি করেছে, পাশাপাশি ব্যতিক্রমী এ উদ্দোগের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন উপজেলা কৃষি অফিসার ।

অবসর সময়ে ও দুপুরের তপ্ত রোদের পরে সূর্যমুখীর এ বাগান পরিণত হয় নানা বয়সী মানুষের মিলন মেলায়। সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি যেন এখন সৌন্দর্য প্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চত্বরে। পরিষদের ভিতরের ৩০ শতক পতিত জমি জুড়ে সূর্যমুখী ফুলের এ বাগান।

এই বাগানের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন শত শত প্রকৃতি প্রেমী হাজির হন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সরেজমিনে উপজেলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ৩০ শতক মাঠ জুরে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সূর্য ঝলমলিয়ে হাসছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। সূর্য যখন যেদিকে হেলছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।

তাই অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি।বাগানে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী মাসুফা আক্তার বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারণ সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল।

বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা নুরজাহান আক্তার বলেন, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারণে আরও বেশি ভালো লাগে। এটাকে অনেকেই শখ করে বাড়ির টবে লাগান। তবে এত বড় বাগান আমাদের চোখে তেমন একটা পড়ে না। দেখে মনে হচ্ছে, সবুজের মাঝে একখণ্ড হলুদ গাছ বাতাসে দোল খেয়ে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে হলুদ আর সবুজ মিশেলে অপরূপ সূর্যমুখীর এ দৃশ্য দেখে আমি অনেক মুগ্ধ।

এমন এক মায়াবী দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করতে পেরে অনেক খুশি আমি। স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, উপজেলা চত্বরের পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ একটা ব্যতিক্রমী উদ্দোগ। এর মাধ্যমে উপজেলায় আসা গ্রামের সাধারণ মানুষ সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর। উপজেলা চত্বরে প্রথম বারের মতো পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষের মুল উদ্দোক্তা কৃষি অফিসার গৌতম পাল। এ ব্যাপারে আলাপকালে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দিক নির্দেশনায় প্রনোদনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি প্রথম বারের মতো সরকারি স্হাপনার সামনে সুর্যমূখীর চাষ করেছেন। প্রথমবার হলে ও ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায় ও সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা রয়েছে এ কারণে আমরা এই ফসলটি আবাদ করেছি। সূর্যমুখী ফুলের বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। সময় ও সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে চাষ করবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন,এই এলাকার মাঠি সূর্যমুখী চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এবং কৃষি বিভাগের নজরদারিতে পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফসল আবাদ করে ভালো ফলন হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যা হার্টের জন্য ভালো।এছাড়া এই তেল আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষিরাও লাভবান হবেন। কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় এই উপজেলার অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঊর্মি রায় বলেন, কৃষি অফিসারের তত্বাবধানে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলা পরিষদের চত্বরের পতিত জমিতে প্রথম বারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ একটা ব্যতিক্রমী উদ্দোগ। পতিত জমির এ বাগান ইতিমধ্যে দর্শনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা যেমন সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাওয়াটা ও তাদের জন্য সহজ হবে।

Source link

Back to top button