Status

উখিয়ায় হাটবাজারের ইজারা মূল্য দশবছরে বেড়েছে দু’হাজার গুনের বেশি-যেন তা সাধারণ মানুষের কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা

 

ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী বিশেষায়িত উপজেলা উখিয়া। অত্র উপজেলার ৫ ইউনিয়নে সরকারিভাবে হাটবাজার রয়েছে ১০টি। এসব হাটবাজারের ১৪৩২ বাংলা সনের ইজারা দরপত্র গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদে উক্ত ইজারার নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

ঐ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, এবার সর্বোচ্চ ইজারা দর ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শত ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে রাজাপালং ইউপির অন্তর্গত বিশ্বের বৃহৎত্তর শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন কুতুপালং বাজারের। গত কাল অনুষ্টিত নিলাম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৫৬ হাজার ৩৭৩ টাকা দর উঠেছে এই বাজারের। ভ্যাট এবং ট্যাক্সসহ এই দর স্পর্শ করেছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। বাজারটির সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছেন ৪নং রাজাপালং এর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান একেএম শাহকামাল চৌধুরী। অথচ ২০১৫ সালে অর্থাৎ ১৪২২ বঙ্গাব্দে এই বাজারের ইজারা দর ছিলো মাত্র ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৩ শত ৩৪ টাকা, সে হিসেবে এবার প্রায় ৪৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প লাগোয়া বাজারটির মূল্য।
শুধু কুতুপালংই নয়, উপজেলার অন্যান্য বাজারগুলোর মূল্য বেড়েছে আনুপাতিক হারে।
এবার রাজাপালংয়ের ইউপিস্থ উখিয়া সদরের দারোগাবাজারের সরকারি মূল্য ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫১ হাজার ৬ শত ৮৯ লাখ টাকা। ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দর দিয়ে উপজেলা সদরস্থ দারোগা বাজারেরও সর্বোচ্চ দরদাতা মনোনীত হয়েছেন একেএম শাহকামাল চৌধুরী। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে এই বাজারের মূল্য ছিলো ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৬ শত ৬৭ টাকা।

পালংখালী ইউপির বালুখালী বাজার, চট্টগ্রাম বিভাগের সব সরকারি বাজারের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড করেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ১৪৩১ বঙ্গাব্দে এই বাজারটির ইজারা বন্ধ থাকলেও এবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩ শত ৭৩ টাকা। নিলামে এ বাজার নিতে সর্বোচ্চ ২ কোটি ২১ লক্ষ টাকা দর দিয়েছেন ফোরকান চৌধুরী। তবে, ২০১৫ সালে মাত্র ৮ হাজার ৭ শত ৩৪ টাকা দর থাকা বালুখালী বাজারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ২ হাজার ৪৫ গুণ।
অন্যদিকে উপজেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত হলদিয়াপালংয়ের মরিচ্যা বাজারের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা, দরদাতা স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর চৌধুরী। এছাড়াও রত্মাপালং ইউপি’র কোটবাজারের সর্বোচ্চ দরদাতা মনোনীত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, উত্থাপিত দর হলো ১ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভালুকিয়া, রুমখাপালং, পালংখালী ও সোনারপাড়ার নিলাম।

এভাবে বছর বছর বাজারের ইজারা মুল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ ক্রেতা পড়েছেন মহা সমাস্যায়। কারণ কোটি কোটি টাকায় ইজারা গ্রহন করে, ইজারাদার নিশ্চয়ই লোকসান দেবার জন্য তা নেননি। তারা ঠিকই সরকারকে প্রদত্ত রাজস্ব সেসব হাট বাজার থেকে উত্তোলন করেও লাভেত একটা অংশ হিসেব নিকেষ করে রেখেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে টাকাগুলো অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই তো উত্তোলন করবে। এর ফলে সাধার ক্রেতা বিক্রেতা কী পরিমান ভোগান্তির শিকার হবে একবার ভেবে দেখেন তো! সাধারণ মানুষ মনে করেন এমনিতে রোহিঙ্গাদের কারণে এখানকার জীবন যাত্রার মান ঢাকার আলিশান এলাকার চেয়ে বেশি। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর অতিরিক্ত মুল্য, ইজারার বাজার মুল্য বৃদ্ধির কারণে পন্যের ইউনিট মুল্য বৃদ্ধি পাবে- যা সাধারণ মানুষের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে বিদ্ধ হবে। এটি যেন ঠিক ‘কাঁটা গায়ে নুনের চিটা’!

এ প্রসঙ্গে কোর্টবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লি: এর সাধার সম্পাদক হারুনুর রশিদ এক পত্রিকায় অযাচিত ইজারা মুল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতার অসুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতিনিয়ত দেখে আসছি যে সমস্ত বাজার পুর্বে ৫/৬ লাখ টাকা বাজার মুল্য ছিল, সেট আজ অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারনে সিডিউল মুল্যের চেয়ে অধিকভমুল্যে বা কোটি টাকা ইজারা দিয়ে বাজার নেবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। কুন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারনে অসহায়, দিন মজুর মানুষগুলো ক্ষ্বত খামারের ফলন বাজারে নামমাত্র মুল্যের পণ্যভবিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলে শতাধিক ইজারা প্রদান করতে হয়।
অনেক ব্যবসায়ীকে শুন্য হাতে ফিরতে হয়। তখন দেখা যায় অনেকের বাসার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্রও কেনার সামর্থ্য থাকে না তাদের।পরিবারের সদস্যদের মুখ দেখাতে পারেন না বলে অনেকে অভিযোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত ইজারার টাকা নেবার কারনে পন্যের মুল্যো অযাচিত বাড়াতে হয়। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা বিরাজ করে।

কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ রবি বলেন, ” এমনিতে সীমান্ত এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তার উপর ইজারা মুল্য অত্যধিক হওয়ায়, এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার উপর। এমনিতে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি বা আবাস স্থলের জন্য হাজার হাজার একর বনভুমি, পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে, প্রান প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত প্রায়। স্থানীয় সাধারণ মানুষের রুজি, রোজগারের পথ রুদ্ধ। একটি কথা না বললেই নয়, স্থানীয় সাধারণ মানুষের অবস্থা কতটুকু শোচনীয় হলে পরে, তারা (স্থানীয়রা) ত্রানের আশায় নিজকে রোহিঙ্গা পরিচয়ে রেজিষ্ট্রেশন ও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে জীবন ধারনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে, স্থানীয় প্রান্তিক মানুষগুলোকে / জনগোষ্ঠীকে ত্রানের আওতায় আনতে পারতো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাথে বসবাসরত স্থানীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অবহেলা করার কারণে স্থানীয়রা রোহিঙ্গা বনে যাবার মতো এমন দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু অসাধু সিন্ডিকেটের প্ররোচনার কথাও পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। হাট বাজারসমুহেত ইজারা মুল্য অত্যধিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ আরো জটিল অর্থনৈতিক দুষ্ট চক্রের আবর্তে পতিত হবে”।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাদের ইজারা মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ইজারার শর্তাবলী পুরোপুরি মানা হচ্ছে কিনা তা যথাযথ মনিটরিং করা হবেও বলে জানান তিনি।

Source link

Leave a Reply

Back to top button