
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর রফতানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে দেশে পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের রফতানি আয় বেড়েছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮৬ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ হাজার ৯৮১ কোটি ডলার।
ইপিবি’র তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম আট মাসে তৈরি পোশাকখাতে রফতানি আয়ে বরাবরের মতোই ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ ও প্লাস্টিক পণ্য রফতানি বেড়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর শ্রমিক অসন্তোষে জর্জরিত ছিল তৈরি পোশাকশিল্প খাতসহ অন্য শিল্পখাতগুলো। সেই সঙ্গে গ্যাস সংকট চরমে। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সরকারি পদক্ষেপে শিল্পোদ্যোক্তারা শঙ্কিত। এ রকম আরো কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যেই টানা ছয় মাস পণ্য রফতানি বেড়েছে। এবার ফেব্রুয়ারিতে রফতানি বেড়েছে গত বছরের একই মাসের চেয়ে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
ইপিবি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে কৃষিজাত পণ্যে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্যে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও পোশাক খাতে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দেশের অন্যদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানি আয় ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬৪ লাখ ডলারে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে এ আয় ছিল ২ হাজার ৪২১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের মধ্যে ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ ডলার এসেছে নিটওয়্যার রফতানি থেকে, যা বছর ব্যবধানে ১১ দশমিক ০১ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে এ আয় ছিল ১ হাজার ২৯১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
এছাড়া ১ হাজার ২৪৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে এ আয় ছিল ১ হাজার ১৩০ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
এদিকে, সদ্যবিদায়ী ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে। আর ২০২৪ সালের একই সময়ে এ আয় ছিল ৩১৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের মধ্যে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার এসেছে নিটওয়্যার রফতানি থেকে, যা বছর ব্যবধানে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ১৫৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক, ওষুধ এবং চামড়াসহ ২৭ ধরনের পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৮০ কোটি কোটি ৫০ লাখ ডলার।
ইপিবি’র তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে কৃষি পণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইলের রফতানি বেড়েছে। হোম টেক্সটাইলের রফতানি আয় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে। আর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রফতানি হয়েছে ৭৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এছাড়া কৃষি পণ্যের রফতানি আয় ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ২৪ লাখ ডলারে। সদ্যবিদায়ী ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।