ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ

বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইউনাইটেড হাসপাতালে অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে নিজের বাবার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছে সন্তান রাকিব উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ওই আবেদনের রিসিভ কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।
এতে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিয়ে রাকিব উদ্দিন অভিযোগ করেন, এখনো আমি মাকে আব্বার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাতে পারিনি। হাসপাতালের অসতর্কতা আর অবহেলায় আমরা তাকে অসময়ে হারিয়েছি। আব্বার বয়স ৮০-এর কাছাকাছি ছিল। এই বয়সে ভালভ রিপ্লেস করার দুটো উপায় ছিল। ওপেন হার্ট সার্জারি করে পুরো বুক কেটে সার্জিক্যাল ভালভ বসানো। আরেকটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি হচ্ছে- টাভি (ট্রান্সক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভালভ ইমপ্ল্যান্টেশন)। টাভি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে পা দিয়ে ফুটো রিং পরানোর মতো করে ভালভ বসানো হয়। এটি ব্যথাহীন বলে দাবি করা হয়।
রাকিব উদ্দিন দাবি করেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ টাভির প্রস্তুতির জন্য আব্বার বিভিন্ন টেস্ট করা হয়। তখন এনজিওগ্রামে তার আরও দুটি ব্লক ধরা পড়ে এবং আরও দুটি রিং বসানো হয়। ২০১২ সালে একটি রিং ছিল। তিনটি রিং পরানোর পর টাভি ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তাও আমাদের খোলাসা করা হয়নি। ডাক্তার বলেছিলেন, টাভি করা যেতে পারে। এই বয়সে ওপেন হার্ট সার্জারি ঝুঁকিপূর্ণ, যা আগেই আমাদের বলা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর আব্বা ভর্তি হন দুইদিনের পর্যবেক্ষণের জন্য। ৯ তারিখ সকাল ৯টায় টাভি শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল না। এতে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। সেদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার দিকে ডাক্তার আমাদের জানান সব ঠিক আছে। তবে একটি জায়গা থেকে সামান্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে, যা স্বাভাবিক। তারপর আব্বাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। হঠাৎ দেখি ডাক্তাররা ছোটাছুটি করছেন। আমার বোন, যিনি ডাক্তার, জোর করে ভেতরে ঢুকে দেখেন আব্বা কলাপস করেছেন। তাকে সিপিআর দেওয়া হয়েছে। চারপাশে রক্ত পড়ে আছে। ওই সময় ডাক্তাররা বলেন, ইন্টারনাল ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছে না। কেন বন্ধ হচ্ছে না- এ বিষয়ে তারা কেউ স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি। টাভির প্রত্যাশিত রেজাল্ট না আসায় ওইদিনই রাতেই আব্বার আরেকটি জটিল সার্জারির (ওপেন হার্ট) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৫টায় তাকে ওটিতে নেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে ওপেন হার্ট সার্জারি করে ব্লিডিং-এর উৎস খুঁজে বের করা হয়। দেখা যায়, টাভির ভালভ বসানোর প্রক্রিয়ায় হার্টে একটি ফুটো হয়েছে, সেখান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ৯ তারিখ রাতে ডাক্তার স্বীকার করেন, ভালভ বসানোর সময় ওপরের দিকে খোঁচা লেগেছে। এরপর ২৪ ঘণ্টা হার্ট ওপেন রাখার পর ডাক্তাররা ১০ তারিখ রাতে আব্বার ব্লিডিং বন্ধ হওয়ার কথা জানান ও হার্ট বন্ধ করা হয়। কিন্তু ওপেন হার্টের পর আব্বার শরীরে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। পরে তাকে বাইপ্যাপ লাগানো হয়। তবুও তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না।
রাকিব উদ্দিন জানান, তাকে কয়েক ধাপে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। ৯ ডিসেম্বর রাত থেকে ১৮ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত সিআইসিইউতে ছিলেন। ১৮ তারিখ তাকে রুমে দেওয়া হয়। এখান থেকেই শুরু হয় ইউনাইটেডের চূড়ান্ত রকমের অবহেলা। কোনো সুস্থ মানুষ মেনে নিবে না। যেমন- ক্রিটিক্যাল রোগীকে হুইলচেয়ারে করে বেডে দেওয়া হয়। কোনো ডাক্তার বা নার্স রোগীর ব্যাকগ্রাউন্ড জানতেন না। জুনিয়র নার্সরা দায়িত্বে ছিলেন। সিনিয়র কাউকে রাখা হতো না। ১৮ ও ১৯-এই দুই রাত রুমে থাকার পর আব্বার অবস্থা আরও খারাপ হয়। আব্বার শ্বাসকষ্ট বাড়লে ২০ তারিখে তাকে আবার সিআইসিইউতে নেওয়া হয়। ২০ তারিখ থেকে আব্বা সিআইসিইউতেই ছিলেন। এরপর ডাক্তার আমাদের জানায়, আব্বার চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে, কিডনি বিকল হয়েছে, ডায়ালাইসিস লাগবে। অথচ আব্বার আগে কখনো কিডনির সমস্যা ছিল না। ২১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ বার আব্বার কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়। মোট ১৬ ব্যাগ হোল ব্লাড এবং ১১ ব্যাগ প্লাটিলেট দেওয়া হয় আব্বাকে। এতো রকমের জটিলতা ও রোগীর শরীর পুরোপুরি কলাপস করার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো বোর্ড কল করেনি। দৃশ্যত ডাক্তারদের ভেতরে কোনো রকমের সমন্বয় ছিল না।
তার এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাকিব উদ্দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ দায়িত্বরতদের অবহেলার জন্য বিচারের আওতায় আনা হোক। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় যাতে কোনো সন্তানকে আর তার বাবাকে না হারাতে হয়।
এসইউজে/এএমএ/জেআইএম