Status

ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তার ঘাটতি পূরণে ইউরোপের প্রস্তুতি কতটা?

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করলে দেশটি প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাপক সামরিক সহায়তা পেতে থাকে। এই সহায়তা ইউক্রেনকে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টিকে থাকার শক্তি দেয়। তবে, বর্তমানে আমেরিকার সহায়তা স্থগিত হয়ে যাওয়ায়, ইউক্রেনের জন্য ভবিষ্যতে সহায়তার প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইউরোপ কি এই সহায়তার ঘাটতি পূরণ করতে পারবে?

 

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পর্যন্ত ইউক্রেনকে ৬৫.৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করেছিল বাইডেন প্রশাসন। এর মধ্যে অস্ত্র, সামরিক যান এবং অন্যান্য সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা ছাড়ার আগে ৫.৯ বিলিয়ন ডলারের আরও একটি সহযোগিতা অনুমোদন করেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতায় আসার পর, এই সহায়তা হঠাৎ করেই স্থগিত হয়ে যায়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি শান্তি আলোচনা নিয়ে হোয়াইট হাউসে আসলে, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন, যার ফলে সহায়তা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

 

আসলে, ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা স্থগিত করা হলেও, এই পরিস্থিতি সাময়িকভাবে ঘাটতি তৈরি করেছে। প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, অস্ত্রগুলোর চালান পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আর ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্বে প্রেরিত অস্ত্রের চালানগুলো ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এই অবস্থায় ইউরোপকে সাহায্য করার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, তবে তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

 

ইউরোপের সামরিক সহায়তার পরিমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যেসব বিশেষ সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে, তা ইউরোপের পক্ষে সরবরাহ করা কঠিন হতে পারে। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক র‌্যাচেল এলেহুস বলেন, মার্কিন সহায়তা বিশেষত তিনটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ: আকাশ প্রতিরক্ষা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ। ইউরোপের কিছু দেশ যেমন জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন, এর পরিবর্তে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

যুদ্ধের ব্যয়ের ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের সামরিক সহায়তা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সহায়তার তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব কিয়েলের হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপ মোট ৬২ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে, যা ৬৪ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ৬৫.৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছে। অর্থাৎ, মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে, ইউরোপকে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হবে এই ঘাটতি পূরণের জন্য।

 

এখন প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপ কি এই ঘাটতি পূরণে সফল হবে? এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক প্রস্তুতি, কৌশল এবং আর্থিক সক্ষমতার ওপর। ভবিষ্যতে, যদি মার্কিন সহায়তা বন্ধ থাকে, তাহলে ইউরোপকে বৃহৎ দায়িত্বের মুখোমুখি হতে হবে, যা তাদের সামরিক ক্ষমতা এবং একাত্মতার পরীক্ষা নেবে। তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

Source link

Leave a Reply

Back to top button