ইউক্রেনকে রক্ষায় জোট গঠনের ঘোষণা ইউরোপের, ৪ দফা পরিকল্পনা

ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ও দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে চার দফা পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং আরও কিছু দেশ একত্রে ‘ইচ্ছুকদের জোট’ গঠন করছে এবং ইউক্রেনকে সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রোববার (২ মার্চ) লন্ডনে ১৮টি পশ্চিমা দেশের নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনের পর স্টারমার বলেন, আমরা আজ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইউক্রেন এই সম্মেলনের মাধ্যমে ‘অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের ইউরোপীয় ঐক্যের শক্তিশালী সমর্থন’ অনুভব করছে।
আরও পড়ুন>>
এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও উপস্থিত ছিলেন। এসময় চার দফা পরিকল্পনার বিষয়ে ঐকমত্য হন ইউরোপীয় নেতারা।
এই পরিকল্পনার মূল বিষয়বস্তুগুলো হলো:
১. ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করা।
২. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোনো শান্তিচুক্তি করা হবে না এবং ইউক্রেনকে অবশ্যই আলোচনার অংশ হতে হবে।
৩. সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে নতুন করে কোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করা যায়।
৪. ইউক্রেনে শান্তি চুক্তি কার্যকর রাখতে ও তা নিশ্চিত করতে ‘ইচ্ছুকদের জোট’ গঠন করা হবে।
স্টারমার আরও ঘোষণা দেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের জন্য আরও ১৬০ কোটি পাউন্ড (২০০ কোটি ডলার) রপ্তানি অর্থায়ন বরাদ্দ করবে, যা দিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। এর আগে, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ২২০ কোটি পাউন্ডের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, যা রাশিয়ার হিমায়িত সম্পদের মুনাফা থেকে আসবে।
স্টারমার বলেন, আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই। এমন কোনো দুর্বল চুক্তি আমরা মেনে নিতে পারি না, যা রাশিয়া সহজেই লঙ্ঘন করতে পারে। শান্তি চুক্তি অবশ্যই শক্ত ভিত্তির ওপর থাকতে হবে।
The summit in London was dedicated to Ukraine and our shared European future.
We feel strong support for Ukraine, for our people – both soldiers and civilians, and our independence. Together, we are working in Europe to establish a solid foundation for cooperation with the… pic.twitter.com/6CiBZ1HhOA
— Volodymyr Zelenskyy / Володимир Зеленський (@ZelenskyyUa) March 2, 2025
এদিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও কানাডার নেতারা।
তবে কোন কোন দেশ প্রস্তাবিত ‘ইচ্ছুকদের জোটে’ যোগ দিতে রাজি হয়েছে তা জানাননি স্টারমার। তিনি বলেন, যেসব দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা এখন জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শুধু কথা বলছি না, আমরা বাস্তবে কাজ করছি—মাঠে সেনা থাকবে, আকাশে প্লেন থাকবে। ইউরোপকে বড় ভূমিকা নিতে হবে।
স্টারমার আরও বলেন, এই চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দরকার, রাশিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তবে শান্তির শর্ত রাশিয়াকে নির্ধারণ করতে দেওয়া যাবে না।
ইউরোপের এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হোয়াইট হাউজে উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ততা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেন, শুক্রবার যা ঘটেছে, তা কেউই দেখতে চায়নি। তবে আমি মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বস্ত মিত্র।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/