অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে

৯ মার্চ, ১৯৭১। এই দিনেও ছিল অগ্নী ঝরা মার্চের অন্যান্য দিনের মতই উত্তাল। এই দিনে অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বত্র হরতাল পালিত হয়।

এ দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যানবাহন, জরুরি সার্ভিস ও ব্যাংক ছাড়া হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, আধা সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ঘরে-ঘরে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। যানবাহন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। স্টেট ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো বন্ধ রাখে। দেশের সর্বত্র মিছিল-মিটিং অব্যাহত থাকে।

পল্টন ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ২৫ মার্চের পূর্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। ভাসানী ঘোষণা করেন- ইয়াহিয়া সাহেব, অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়িয়ে লাভ নেই। তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার। নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা মেনে নাও। তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশমতো আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কোনো কিছু না করা হলে আমি মুজিবের সঙ্গে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করব। তিনি বলেন, ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে তাহলে তুমি পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন ঘোষণা কর। এতে করে দুই পাকিস্তানে ভালবাসা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এক পাকিস্তান আর থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না!

পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনো আইন পাস করে আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে আপনারা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাতে পারতেন। পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষ আপনাদের সমর্থন করত। তিনি বলেন, বাঙালি, বিহারি, হিন্দু, মুসলমান সকলেই এ দেশের অধিবাসী। এদের জানমাল রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। বিহারিরা পশ্চিমা নয়।

ওয়াপদা ফেডারেশনের ১৬ জন নেতা যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ‘এক মরণজয়ী সংগ্রাম’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শপথ নেয়া হয়। অপর এক প্রস্তাবে ‘ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস’ নামকরণ করা হয়।

Source link

Exit mobile version